১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
পুলিশের গুলিতে পুলিশ নিহত

সবারই ধৈর্যশীল হওয়া জরুরি

-


বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনে (কূটনৈতিক এলাকা) পুলিশ কনস্টেবল কাওছার আলী তারই সহকর্মী মনিরুল হককে গুলি করে হত্যা করেছেন। গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী, কাওছার মোট ৩৮ রাউন্ড গুলি ছোড়েন মনিরুলের ওপর। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ থেকে জানা গেছে, কোনো বিষয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া বা উত্তেজনাপূর্ণ কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। কাওছার জাপান দূতাবাসের একজন গাড়ি চালককেও গুলি করে গুরুতর আহত করেছে।
এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং পুলিশ কাওছারকে গ্রেফতার করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। কিন্তু গুলির কারণ জানতে পারেনি। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুই পুলিশ সদস্যের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল এমন তথ্য তারা পাননি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেছেন, অতিরিক্ত ডিউটির কারণে কোনো সমস্যা হয়নি। আর এখন পুলিশের কোথাও ডিউটির অতিরিক্ত চাপ নেই। অর্থাৎ অতিরিক্ত চাপের কারণে কোনো রকম মানসিক চাপ কাওছারের ওপর ছিল না। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলামের বক্তব্যের বরাত দিয়ে দৈনিক মানবজমিনের খবরে বলা হয়, ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও গুলি ছোড়ার ধরন দেখে বোঝা যায় কাওছার আলী ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছেন।

রাজধানীর সবচেয়ে নিরাপদ এলাকা হিসেবে কথিত কূটনৈতিক এলাকায় দুই পুলিশের খুনাখুনির ঘটনায় সেখানকার প্রকৃত নিরাপত্তা পরিস্থিতির নাজুকতা প্রকাশ করে। তবে তার চেয়েও যে বিরূপ সত্য এতে বেরিয়ে আসে সেটি উদ্বেগের। যেকোনো ঘটনায় পুলিশের প্রতিটি সদস্যের মাথা ঠাণ্ডা রেখে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার কথা। সেই ধৈর্য, স্থিরতা বা সহনশীলতার সামান্যও নেই। এটি কেবল এই ঘটনাতেই প্রকাশ পেল তা নয়। এমন বেশ কিছু ঘটনা গত কয়েক বছরে ঘটেছে যা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা বিস্তারের প্রমাণ দেয়। এই অসহিষ্ণুতা একদিনে তৈরি হয়নি। অথবা নিছক পুলিশ বিভাগের একার বিষয়ও নয় এটি। সমাজের প্রতিটি স্তরেই সহিষ্ণুতার অভাব তীব্রভাবে স্পষ্ট। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো খোদ সরকারের দায়িত্বশীলদের অসহিষ্ণুতা।
তাদের প্রতিহিংসাপরায়ণতা টের পাওয়া যায় যখন তারা পুলিশকে ব্যবহার করেন বিরোধী দলের কর্মসূচি চরম নির্মমতার সাথে ভণ্ডুল করে দিতে। বিরোধী দলের চিফ হুইপকে পার্লামেন্টের সামনে পুলিশ কর্মকর্তার বেধড়ক পিটুনির সেই ঘটনা থেকে যার শুরু। নানা ঘটনায় এমনকি সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে মন্ত্রীদের ক্ষেপে যাওয়া এবং অসহিষ্ণু আচরণ আমরা দেখেছি বহুবার। এসব আচরণ সমাজে বিরূপ বার্তা পাঠায় এবং সমাজের প্রতিটি মানুষ তাতে প্রভাবিত হয়। সমাজে অসহিষ্ণুতার বিস্তার ঘটে।
বারিধারায় পুলিশের হাতে পুলিশ খুনের ঘটনার পেছনের সত্য নিশ্চয়ই উদ্ঘাটিত হবে। তবে সামান্য কথাকাটাকাটির ঘটনায় নিজের সহকর্মীকে উপর্যুপরি ৩৮ রাউন্ড গুলি ছুড়ে হত্যার পেছনে গভীর কোনো প্রতিহিংসা না থেকে পারে না। আমরা সেই সত্য জানার জন্য অপেক্ষা করব। সেই সাথে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও দায়িত্বপূর্ণ আচরণ আশা করব।


আরো সংবাদ



premium cement