১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
উপকূলজুড়ে ঘূর্ণিঝড়ের হানা

দ্রুত পুনর্বাসন জরুরি

-


দেশের দক্ষিণ উপকূলে তাণ্ডব চালিয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। মধ্যরাতে ঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরের বেশ বিস্তীর্ণ অঞ্চল। উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে শত শত গ্রাম। অনেক শহর তলিয়ে আছে পানিতে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। বাঁধ ভেঙে পানি ঢোকায় পানিবন্দী খুলনা ও বরিশাল বিভাগের নিচু এলাকার লাখো মানুষ। প্রবল ঝড় ও বৃষ্টির কারণে অসংখ্য ঘরবাড়ি, দোকানপাট লণ্ডভণ্ড হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙেছে অসংখ্য গাছপালা, বাড়িঘর, বেড়িবাঁধ। বরগুনার আমতলী উপজেলার বালিয়াতলী ও পশুরবুনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৩০০ ফুট ভেঙে গেছে। ভোলার মনপুরা, লালমোহন, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলায় ১০টি স্থানে এবং সাতক্ষীরা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দক্ষিণ অঞ্চলের অনেক মাছের ঘের, পুকুর, জলাশয় ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ধানের ক্ষতিও হয়েছে যথেষ্ট। সাগরের লোনা পানিতে এসব এলাকার ফসলি জমির দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হতে পারে। ভারী বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে আছেন অনেক জেলার মানুষ। ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও স্বস্তির বিষয় এই যে, মৃত্যুর ঘটনা তেমন একটা ঘটেনি। এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

রোববার মধ্যরাতে থেকে ভোর রাত পর্যন্ত দক্ষিণ উপকূলে তাণ্ডব শেষে অনেকটা দুর্বল হয়েছে ঘূর্ণিঝড়। যতটা প্রলয়ঙ্করী হবে বলে মনে করা হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় রেমাল ততটা বিধ্বংসী হয়নি। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ তখন ছিল ৯০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
ঝড়ের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল ভোর থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দেখা যায়। রাজধানীতে সোমবার ভোর থেকে বৃষ্টি ঝরতে শুরু করে। সেই সাথে ছিল দমকা বাতাস। অনেক এলাকার রাস্তাঘাটে পানি জমে যায়। দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামী মানুষ। যানবাহন পেতে অনেককে ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক শিক্ষার্থী স্কুল কলেজে যেতে পারেননি। আবহাওয়া দফতরের তথ্যমতে, গতকাল দুপুরের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রভাগ ঢাকায় পৌঁছার কথা। তবে তার আগে ঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ে।

এখন যেটি দরকার তা হলো বিস্তীর্ণ উপকূলীয় জেলাগুলোতে অবিলম্বে পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নেয়া। বিদ্যুৎ সংযোগ প্রতিষ্ঠার কাজ এর মধ্যে শুরু হয়েছে। কিন্তু ভেঙেপড়া বেড়িবাঁধ ও অন্যান্য বাঁধ মেরামত করা জরুরি। এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এর আগের একাধিক ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর মেরামতে সরকারের তেমন উৎসাহ দেখা যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনেক বাঁধ ঘূর্ণিঝড় রেমালের আগে থেকে ছিল ঝুঁকিতে। এবারো একই অবস্থা হয় কি না এমন সংশয়ের কারণ আছে।
দরকার জলাবদ্ধতার নিরসন করে লোনা পানির ক্ষতি থেকে ফসলি জমি রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া। ভেঙে যাওয়া রাস্তাঘাট মেরামতসহ ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোর সংস্কার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা অতীব জরুরি। কিন্তু সবার আগে দরকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে সমন্বিত উদ্যোগ। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement