১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বেসরকারি শিক্ষকের লাখো পদ শূন্য

নিয়োগে গড়িমসি কেন

-


বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক লাখেরও বেশি শিক্ষক পদ শূন্য। শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) দীর্ঘকাল ধরেই শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু শূন্যপদ পূরণ হচ্ছে না; বরং দিনদিন তা আরো বাড়ছে। দেশে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরে শিক্ষার মান নিয়ে অসন্তোষ আছে। এ বিষয়ে প্রায়ই আলোচনা হয় নানা মাধ্যমে। শিক্ষার নি¤œমানের জন্য প্রায়ই মুখ্য কারণ হিসেবে উঠে আসে যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবের বিষয়টি। যোগ্য শিক্ষক না থাকার কারণগুলোও বেশ বিস্তারিতভাবেই চিহ্নিত ও আলোচিত হয়। শিক্ষকতার পেশাটিকে আমরা কোনো দিক থেকেই আকর্ষণীয় করতে পারিনি। তাই তরুণরা আগ্রহ থাকলেও এ পেশায় আসতে চান না। কিন্তু খুব সাধারণভাবে চিন্তা করলেও স্পষ্ট হয়ে যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেখানে শিক্ষকই নেই, সেখানে যোগ্য শিক্ষকের প্রশ্ন আসে কিভাবে! শিক্ষার্থীরা শিক্ষাই পাচ্ছে না, পদে পদে ব্যাহত হচ্ছে নিয়মিত পাঠদান। মানসম্মত শিক্ষা তো দূরপরাহত থাকবেই।
আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হতে হবে শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ। তারপর আসবে শিক্ষকদের মানোন্নয়নের প্রশ্ন। কিন্তু বাস্তব অবস্থা এই যে, শূন্যপদ পূরণের কাজটি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে এগোচ্ছে না।

দেশে শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য কয়েক লাখ নিবন্ধন সনদধারী থাকলেও তারা নানা কারণে নিয়োগবঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। সর্বশেষ যে নিয়োগপ্রক্রিয়া চলছে সেখানে এক লাখ পদের বিপরীতে আবেদন করতে পেরেছেন মাত্র ২৪ হাজার প্রার্থী। মনে হয় যেন দেশে নিয়োগের মতো শিক্ষিত বেকার কেউ নেই। অথচ বাস্তবে কর্তৃপক্ষের নানা ‘বিধিমালার বেড়াজাল’ এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, এনটিআরসিএ এমন নিয়ম করেছে, যাতে যোগ্য প্রার্থীরাও অযোগ্য হয়ে গেছেন। এবারের বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারেননি। অনেকের বয়স ফুরিয়ে গেছে নিয়োগপ্রক্রিয়ার কচ্ছপগতির কারণে। এবার ১ থেকে ১৫তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কাউকে আবেদন করতে দেয়া হয়নি। ১৭তম নিবন্ধনধারীদের একটি অংশের বয়স ৩৫ বছরের বেশি হয়ে গেছে। তাদেরও আবেদন করতে দেয়া হয়নি। ২০২২ সালে ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় মাত্র ২৭ হাজার ৭৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। বাকি সব পদ শূন্য ছিল।
শিক্ষকসঙ্কট চরমে পৌঁছলেও নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কর্তৃপক্ষের শম্বুকগতির কারণ বোধগম্য নয়। এক বছরের পরীক্ষা শেষ করতে চার বছর কেন লাগবে? আবার রাজনৈতিক কারণও যে অন্যতম বাধা সেটি না বললেও সবারই জানা। বর্তমান সরকারের গত ১৫ বছরের ক্ষমতার মেয়াদে বিসিএস থেকে শুরু করে যেকোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর নিজের ও তার পরিবারের রাজনৈতিক অবস্থান খুঁজে দেখা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। এটি সরাসরি দেশের সংবিধানের লঙ্ঘন। কিন্তু তা অবাধে ও নির্বিবাদে চলছে। ফলে নিয়োগপ্রক্রিয়া চললেও বিপুলসংখ্যক শূন্যপদ থেকেই যাবে। শিক্ষকসঙ্কটের সুরাহার আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই।
প্রশ্ন জাগে, যেখানে উত্তীর্ণ সবাইকে সম্ভব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নিয়োগ দেয়া দরকার সেখানে কর্তৃপক্ষ কেন গড়িমসি করছে? তারা কি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কল্যাণে কাজ করছেন নাকি ধ্বংসে?


আরো সংবাদ



premium cement