১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ইরানি প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

-

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাশিয়া, চীন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টসহ বিশ্বনেতারা রাইসির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রাইসির মৃত্যুকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন একটি অপূরণীয় ক্ষতি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইরানিদের জন্য এটি একটি বড় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হত্যার শিকার হয়েছেন। কমান্ডার কাশেম সোলায়মানিকে নিশানা করে খুন করা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে কপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার কথা খবরে এলেও রাইসির মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বরাজনীতির জন্য গভীর তাৎপর্যবহ।
প্রতিবেশী দেশ আজারবাইজানের সাথে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর শেষে রাইসি একটি জলাধার উদ্বোধন করেন। এরপর আজারবাইজানের তাবরিজে যাওয়ার পথে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে রাইসিকে বহনকারী কপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় তার সফরসঙ্গী ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এক মুখপাত্র প্রাণ হারান। রাইসির মৃত্যুতে ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের শীর্ষপর্যায়ে শূন্যতা দেখা দেবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চলা দ্বন্দ্ব মোকাবেলায় তেহরানের কিছুটা বেগ পেতে হতে পারে। যদিও দেশটির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পরিষদ ইতোমধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়াগ দিয়েছে। সংবিধানের বাধ্যবাধকতায় কয়েক মাসের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ঘটনা পরম্পরা ইঙ্গিত দেয়, এ অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্যে আরো বড় পরিবর্তন আসতে পারে। এ অঞ্চলের রাজনীতিতে ইরান অন্যতম নিয়ামক। দেশটির সাথে মুসলিম বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সৌদি আরবের বৈরিতা এ অঞ্চলে শান্তি স্থাপনে বড় বাধা হয়ে ছিল। সব তিক্ততা একপাশে রেখে ইরান-সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইয়েমেনে চলা গৃহযুদ্ধে সমঝোতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের বিরোধ আরো তিক্ত হয়েছে। ইরাক-সিরিয়া ইস্যুতে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইরান অবস্থান ক্রমেই সুদৃঢ় করেছে। ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশটি সবসময় সোচ্চার। সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে ইসরাইলি হামলার জবাব দিয়েছে তেহরান। গাজায় চলা গণহত্যার মধ্যে ইসরাইলে নিয়ন্ত্রিত হামলা চালিয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিয়েছে। দেখা গেল, ইসরাইলের আকাশপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অজেয় নয়। প্রেসিডেন্ট রাইসির বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়া কট্টরপন্থার অভিযোগ আনে। বাস্তবতা হচ্ছে- তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একরোখা আচরণ ও ইসরাইলি আগ্রাসন মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছেন। এমনকি তার দেশে চলা তীব্র গণ-আন্দোলন সফলভাবে মোকাবেলা করেছেন। ইরানে এ ধরনের গণ-আন্দোলনের প্রধান কারণ মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে দশকের পর দশক ধরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। এর বহুমুখী বিরূপ প্রভাব দেশটির অর্থনীতিতে পড়েছে। নানামুখী চাপেও ইরান ধীর পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। দেশটির যোগ্য নেতৃত্ব বিশ্বসভায় ইরানকে প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে।
বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারসাম্য আনতে একটি শক্তিশালী ইরান প্রয়োজন। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্র মদদ দিয়ে এ অঞ্চলকে দমিয়ে রেখেছে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রশাসন এমন সব শাসককে ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করছে যাদের জনভিত্তি নেই। এসব স্বৈরশাসক নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হয়ে ইসরাইলকে সমর্থন জোগায়। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তেহেরান দশকের পর দশক ধরে একা লড়াই করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাইসিকে এ লড়াইয়ের একজন সম্মুখযোদ্ধা বলা যায়। তাই তার মৃত্যুতে কিছুটা হলেও শূন্যতা তৈরি হবে। তবে আশা করা যায়, ইরান দ্রুত এ শূন্যতা কাটিয়ে উঠবে।


আরো সংবাদ



premium cement