১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
শিক্ষায় প্রত্যাশিত মনোযোগ নেই

বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে

-

দেশের শিক্ষা খাতে নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশিত মনোযোগ নেই। শিক্ষা খাতে টাকার অঙ্ক বাড়লেও বাজেট এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ খুব একটা বাড়েনি। বাজেটে এ খাত অনেকটা অবহেলিত। আগামী বাজেটেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার ইঙ্গিত নেই। একই সাথে দক্ষ ও সময়োপযোগী মানবসম্পদ তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
বিশ্বব্যাংকের ১৮৯টি সদস্য দেশের মধ্যে জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম খরচ করে, এমন ১০টি দেশের একটি বাংলাদেশ। সংস্থাটির হিসাব অনুসারে, বাংলাদেশ শিক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ খরচ করে। শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের চেয়ে কম খরচ করা দেশের বেশির ভাগ অতিদরিদ্র হিসেবে পরিচিত।
সহযোগী এক দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) শীর্ষ তিনটি খাতের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত নেই। বরাদ্দ পাওয়ার বিবেচনায় শীর্ষ তিন খাত হলো- স্থানীয় সরকার বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগ। এ তিন খাত এডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ বরাদ্দ পাচ্ছে। কারণ, জনতুষ্টির এসব প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন সহজে দৃশ্যমান হয়।
গত পাঁচ বছরের বাজেট বরাদ্দ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময় শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বাজেটের ১২ শতাংশ। অন্যদিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতের শিক্ষা খাতের বরাদ্দ ২ শতাংশের মতো। এর মানে হলো, সরকার এ খাতের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না।
চলতি অর্থবছরের এডিপিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ৫৮টি প্রকল্প আছে। এর মধ্যে ৫৫টি প্রকল্প ভবন নির্মাণসংক্রান্ত। শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনে খরচের তেমন প্রস্তাব নেই।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী এডিপিতে শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, যা মোট এডিপির প্রায় ১২ শতাংশ। অথচ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ খাতে মোট এডিপির সাড়ে ১৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল।
কোভিডের সময় প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। অনলাইনে পাঠদান হলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের শিখনঘাটতি হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনাকালের শিখনঘাটতি পূরণে একটি পুনরুদ্ধার কর্মসূচি নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু সরকার এ ধরনের কোনো উদ্যোগ বা প্রকল্প নেয়নি।
শিক্ষা খাতের পরিচালন বরাদ্দ দিয়ে মূলত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ মেটানো হয়। উন্নয়ন বরাদ্দ দিয়ে স্কুল, কলেজ ভবন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে খরচ করার কথা। কিন্তু এ খাতে ভবন নির্মাণে বেশি আগ্রহ দেখা যায়।
বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতি ৩৩ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক আছেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে এ অনুপাত ১ : ৩৬। এটি সরকারের লক্ষ্যের কাছাকাছি। এখন প্রয়োজন দক্ষতা উন্নয়নে শিখনপদ্ধতি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এসবে নজর কম নীতিনির্ধারকদের।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, শিক্ষা খাতের ব্যয় হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এতে লাভ বেশি। এ জন্য এ খাতে বিনিয়োগ করা দরকার। তাই বাজেটে প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত শিক্ষা। দেশে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকার বেশি। শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে না পারায় বিদেশ থেকে জনবল আনতে হচ্ছে। তারা বছরে ৬০০ কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছেন, যা দেশের প্রবাসী আয়ের ৪ ভাগের ১ ভাগের সমান।
শিক্ষাবিদদের মতো আমরাও মনে করি, জিডিপির অনুপাতে শিক্ষায় বরাদ্দ অন্তত ৬ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন। তা করতে হলে বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দিতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে বেশি জোর দিতে হবে। এ জন্য জিডিপির অনুপাতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement