১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
পরীক্ষার হলে ডিভাইসে অভিনব নকল

জালিয়াতদের কোনো ছাড় নয়

-

কিছু বিষয় থাকে যা নিয়ে কোনো আপস চলে না। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা- এ ধরনের বিষয়। নিজেদের সুস্থ থাকার প্রয়োজনে প্রতিটি জাতি ভেজাল মেশানো থেকে বিরত থাকে। পৃথিবীতে আমরা একমাত্র জাতি, নিজেদের খাদ্যে নিজেরা বিষ মেশাই। স্বাস্থ্য বিভাগ এ দেশে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত একটি খাত। অন্য যে বিষয়টি বিশুদ্ধ রাখতে জাতিগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় সেটি হলো শিক্ষা। নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য স্বাতন্ত্র্যবোধ সামনে রেখে দেশে দেশে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। আমাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে এর উল্টো। এ দেশের সবচেয়ে অবহেলা ও অনাদর যদি কোনো একটি খাতে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে সেটি জাতীয় শিক্ষায়।
বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রমকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, শিক্ষার্থীরা তা থেকে জাতীয় চেতনা অর্জন করতে সক্ষম হবে না। এর সাথে সাথে নকলপ্রবণতা এত গভীরে প্রবেশ করেছে যে, সেটি ছড়িয়ে পড়েছে সবধরনের সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায়। ঘুষ দিয়ে, অনিয়ম করে সরকারি পদ বাগিয়ে নেয়ার জালিয়াতি আগে থেকে আছে। তার ওপর নিত্যনতুন পদ্ধতিতে জালিয়াতি করে অযোগ্যরা সরকারি চাকরিতে ঢুকে পড়ছেন। এর সর্বশেষ সংস্করণ পাওয়া গেল অন্তর্বাসে অত্যাধুনিক যন্ত্র নিয়ে নকলের কৌশল।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এমন একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে। তাদের ভাষ্যমতে, এর মাধ্যমে বিপুল অর্থ কামিয়ে নিয়েছে জালিয়াতচক্র। তবে সবচেয়ে শঙ্কার বিষয়, অভিনব এ পদ্ধতিতে কতজন সরকারি চাকরি বাগিয়ে নিয়েছে তা কোনো দিন জানা যাবে না। কোনো ধরনের যোগ্যতা ছাড়া এরা পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্নের সমাধান পেয়ে সঠিক উত্তর দিয়েছে, যথারীতি সবচেয়ে বেশি নম্বর নিয়ে পাস করেছে। ফলে পরীক্ষার পরবর্তী ধাপেও বেশি নম্বর পাওয়ার সুবিধা নিয়ে মেধাবীদের পেছনে ফেলে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে। এ চক্র পরীক্ষার্থীদের অন্তর্বাসে একটি ডিভাইস বসিয়ে দেয়, কানে থাকে শোনার ক্ষুদ্র যন্ত্র। অন্য দিকে পরীক্ষাকেন্দ্র আগেই তারা ম্যানেজ করে নেয়। প্রশ্নপত্র বিতরণের সাথে সাথে হল থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কপি করে বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। চক্রের সদস্যরা বাইরে বসে প্রশ্নের সমাধান করে তা ওই ডিভাইসের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছে পৌঁছে দিত। বাইরে থেকে ফোনকল করলে সেটি প্রার্থীর কানে বেজে ওঠে। সব প্রশ্নের উত্তর সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তারা পেয়ে যায়।
পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস বর্তমান সরকারের আমলে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাইমারি থেকে স্নাতকোত্তর- এমন কোনো পরীক্ষা নেই যার প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। এর সাথে যোগ হয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতি। কিছু পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে কিংবা অন্য কোনো জালিয়াতি হতে পারে, তা ছিল ধারণারও বাইরে। বিশেষ করে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা এবং বিসিএসের বিভিন্ন পর্যায়ের বাছাই পরীক্ষা। মেডিক্যাল ভর্তিতে বিগত এক যুগে যে ধরনের জালিয়াতির খবর প্রকাশ হয়েছে তা অবিশ্বাস্য। এখন চিকিৎসকদের নিয়ে মানুষের সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। তারা পড়াশোনা করে ডাক্তার হচ্ছেন, না কোনোভাবে জালিয়াতি করে ডিগ্রি সংগ্রহ করেছেন।
পরীক্ষার হলে নকলেও নতুনত্ব এনেছে জালিয়াতচক্র। আমরা আশা করব, এ চক্রের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আন্তরিক অভিযান চালাবে। তারা কোন কোন পরীক্ষায় এই জালিয়াতি করেছে; সেগুলো শনাক্ত করে ভুয়াদের বের করে আনতে হবে। যারা এ কাজে নকলবাজদের সহায়তা করেছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল