১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দায় নেই প্রবাহ

নদ-নদী বিলীন হয়ে যাচ্ছে

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের ভয়াবহ নাব্যতা সঙ্কটে পরিবেশ বিপর্যয়সহ আবাদে নেমে এসেছে স্থবিরতা। নদ দু’টির তলদেশে পানির প্রবাহ না থাকায় সেচনির্ভর কৃষকরা বোরো মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে ক্ষেতে সেচ দিতে পারেন না। এককালের উত্তাল ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ স্মৃতির গহিনে হারিয়ে যাচ্ছে যদিও বেশ কয়েক বছর আগে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের বেশির ভাগ খনন করলেও পানিপ্রবাহ না থাকায় অস্তিত্ব ও নাব্যতা সঙ্কটে স্রোতহীন মরা খালে পরিণত হয়েছে। অতিদ্রুত ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদী দু’টি পুনঃখনন করে পানির প্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন দু’পারের মানুষ। তাতে সুফল পাবে কৃষকসহ সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন হোসেনপুর-গফরগাঁও সড়কের খুরশিদ মহল সেতুসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে পলি জমে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। হোসেনপুর, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ ও জামালপুর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের পানির প্রবাহ না থাকায় এর অস্তিত্ব প্রায় বিলীনের পথে। নদের তলদেশে চলছে চাষাবাদ। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্যসহ মৎস্যসম্পদ ও জলজপ্রাণী। জেলে পরিবারগুলো বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। খেয়ার মাঝিরা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে আদি পেশা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শাখা নদীগুলোও বিত্তবানদের ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখলে প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই প্রাণহানি ঘটে থাকে। ব্রহ্মপুত্রের খাসজমি ও বালু ব্যবসার আধিপত্যের জেরে অসন্তোষ বেড়েই চলেছে।
হোসেনপুরের চর জামাইল থেকে চর পুমদি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নরসুন্দা নদ যথাযথ খনন না করা ও পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে সংযোগ রক্ষা না করায় কচুরিপানায় ভরা।

রামপুর বাজারসংলগ্ন নরসুন্দাপাড়ের ব্যবসায়ী সঞ্জীত চন্দ্র শীলসহ অনেকেই জানান, একসময় নরসুন্দা নদ দিয়ে আশুগঞ্জ, ভৈরব-সুনামগঞ্জ থেকে বড় বড় নৌকা ও কার্গো মালামাল নিয়ে মাওনা ও বরমী বাজার পর্যন্ত চলাচল করত।
ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন খুরশিদ মহল গ্রামের ওয়াদুদ মিয়াসহ অনেকেই জানান, নাব্যতা সঙ্কটে দু’ধারের জমিগুলোতে প্রতি মৌসুমে সেচ দিতে না পেরে কৃষকরা চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তার। তা ছাড়া ভাঙনরোধে কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা না নেয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, স্কুল, মাদরাসা ও মসজিদ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার বলা হলেও নেয়া হয়নি কার্যকর উদ্যোগ। নাব্যতা সঙ্কটে নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় ব্যবসাবাণিজ্যতেও এর প্রভাব পড়েছে। বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়েই নৌবহর নিয়ে হোসেনপুর এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নৌবহরও নিয়মিত টহল ও রসদ সরবরাহের নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করত। হোসেনপুরে নীলকুঠিও স্থাপন করা হয়েছিল। ইতিহাস কেবল স্মৃতি, নাব্যতা সঙ্কটে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ বিপন্ন।


আরো সংবাদ



premium cement