১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সাংবাদিকদের হয়রানি নির্যাতন

বাক-স্বাধীনতার প্রতি হুমকি

-

দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও পরিবেশ খুবই দুর্বল হয়ে তলানিতে অবস্থান করায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা উদ্বেগজনকভাবে সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। সেই সাথে সাংবাদিকদের ওপর হামলা-মামলা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বহু গুণ বেড়ে যাওয়ায় অবাধ মতপ্রকাশে তা হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। লক্ষণীয়, প্রতিনিয়ত সাংবাদিকরা ক্ষমতাসীন-প্রভাবশালীদের হাতে হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এমনকি তাদের প্রাণও দিতে হচ্ছে।
সংবাদকর্মীরা দেশে বর্তমানে কতটা অসহায় ও নিরাপত্তাহীন তার নমুনা পাওয়া যায় একটি মানবাধিকার সংগঠনের হালনাগাদ তথ্যে। এতে দেখা যায়, গত এপ্রিলে অন্তত ২৭টি হামলার ঘটনায় ৪৭ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৩ জন সংবাদকর্মী। হুমকি দেয়া হয়েছে ছয়জনকে। লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন আটজন। আর ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এফডিসিতে চলচ্চিত্র শিল্প সমিতির নির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের ওপর হামলায় ২০ জনেরও বেশি সংবাদকর্মী আহত হয়েছেন। সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এর অধীনে দায়ের করা সাতটি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তিনজন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ৩১ জনকে।
দেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) অনুসন্ধানী ইউনিটের তথ্যের ভিত্তিতে এপ্রিলের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
স্বাধীনতা-উত্তর দেশে উল্লেখ করার মতো ইতিবাচক অনেক সাফল্য অর্জিত হলেও আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সভা সমাবেশের অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা, নারীর অধিকারসহ সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে নিয়মিত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
এইচআরএসএসের উল্লেখিত প্রতিবেদনে বর্ণিত পরিসংখ্যানের চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা যে আরো অনেক বেশি তা সহজে অনুমেয়। এ অবস্থায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে অংশীজনদের সাথে সরকারের আলোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা জরুরি। তবে সবার আগে প্রয়োজন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা। এসব বিষয় বাস্তবায়ন করতে না পারলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাবে। দেশের সব সচেতন নাগরিক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সর্বজনীন মানবাধিকার রক্ষায় আরো সোচ্চার হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
মানবাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা সরকারের অত্যাবশ্যক কর্মের একটি। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে দেশে দেড় দশক ধরে মানবাধিকারের ধারাবাহিক অবনতি দেখতে পাওয়া যায় দেশীয় ও বৈশ্বিক যেকোনো সূচকে। ক্ষমতাসীনদের মনে রাখা প্রয়োজন, দেশে সংবাদমাধ্যম অবাধ ও মুক্তভাবে সংবাদ পরিবেশন করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সমাজে জবাবদিহিতার পরিবেশ মজবুত হতে পারে না। এ জন্য সাংবাদিকদের কর্মপরিবেশ নির্ঝঞ্ঝাট রাখা অতীব প্রয়োজন। কিন্তু কায়েমি স্বার্থবাদীরা নিজেদের স্বার্থে আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড বাধাহীনভাবে চালিয়ে যেতে গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতে সবসময় তৎপর। তাই তাদের নিশানা থাকে গণমাধ্যমকর্মীদের কীভাবে হেনস্তা করা যায়। প্রয়োজনে নির্যাতন-হয়রানি এমনকি হত্যা করে হলেও সাংবাদিকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে কুণ্ঠিত হয় না স্বার্থান্বেষী মহল। ফলে দেশে আগের চেয়ে সংবাদকর্মীদের ঝুঁকি বেড়েছে বৈ কমেনি।


আরো সংবাদ



premium cement