১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
উপকূলীয় এলাকায় বেড়েছে লবণাক্ততা

ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে উদাসীনতা

-

বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। নদী-নালায় পানিপ্রবাহ ধীর হয়ে আসায় সমুদ্রের জোয়ারের পানি সহজে উজিয়ে আসে। শুষ্ক মৌসুমে এ প্রক্রিয়া জোরালো হয়। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা অঞ্চলের নদীতে শুষ্ক মৌসুমে এখন লবণাক্ত পানির পরিমাণ বেড়ে গেছে।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, নদীসংলগ্ন এলাকার জমিতে লবণাক্ততায় মাটির গুণ নষ্ট হয়ে কমে যাচ্ছে ফসলের উৎপাদন। পরিবেশের ক্ষতি হওয়ায় বনভূমির গাছপালা মরে যাচ্ছে, সবুজ আচ্ছাদন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে মিঠা পানির সাথে লবণ পানি মিশে যাওয়ায় মানুষ বাধ্য হচ্ছে লবণাক্ত পানি পান করতে। আইসিডিডিআর,বি, লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ অনেক ক্ষেত্রে ২০০ গুণ বেশি লবণ খেতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের মতো নানা রোগব্যাধি।
উপকূলের নদীগুলোতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার সাথে উজান থেকে পানিপ্রবাহ রোধের সম্পর্ক আছে। ৫৪টি অভিন্ন নদীর প্রবাহে প্রতিবেশী দেশ ভারতের হস্তক্ষেপ এর অন্যতম কারণ। আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি, নদী-আইন সব ভাটির দেশের অনুকূলে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র তথা সরকারের দুর্বল অবস্থানে এর কোনো বিহিত করা যাচ্ছে না।
নয়া দিগন্তের বিভিন্ন রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, তীব্র তাপদাহ ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে গত ১০ বছরে খুলনা অঞ্চলে ১২১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৃত্তিকাসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এসআরডিআই) হিসাব অনুযায়ী, উপকূলীয় অঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ আট লাখ ৭০ হাজার হেক্টর। উপকূলীয় অঞ্চলের জমিগুলো শুধু লবণাক্ততার কারণে ফলন হারাচ্ছে বছরে ৩০ লাখ ২৭ হাজার টনেরও বেশি। এতে বছরে শুধু ফসলের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।
গবেষণায় দেখা যায়, খুলনা জেলার দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলা অঞ্চলে পুকুরের পানির চেয়ে নলকূপের পানিতে লবণ বেশি। এ পানি পান করায় গর্ভবতী মায়েরা বেশি মাত্রায় উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
আমরা জানি, মাটি আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। লবণাক্ততায় জমির স্বাস্থ্য ও উর্বরতার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়েছে। লবণাক্ততা রোধে আমাদের মূল কাজ হবে আন্তর্জাতিক নদীপ্রবাহের ন্যায্য হিস্যা আদায় করা। এটি করতে না পারলে অন্য কোনো কার্যক্রম সুফল দেবে না।
সরকারি তথ্য বলছে, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় দেশের উপকূলের প্রায় দুই লাখ কৃষক বাস্তুহারা হবেন। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের গবেষণাতে। ‘রিভার স্যালাইনিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ, এভিডেন্স ফ্রম কোস্টাল বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে এ অঞ্চলের ১৯ জেলার ১৪৮টি থানা মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততায় আক্রান্ত হবে। খাবার পানি, সেচের পানির সঙ্কট দেখা দেবে, মারা যাবে স্বাদু পানির মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হবে মৎস্যজীবীসহ সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা।
উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা সহনশীল ধানসহ নানা ফসল প্রচলনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেগুলো জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে; কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির নিশ্চয়তা তাতে নেই।


আরো সংবাদ



premium cement