১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
মানবাধিকার পরিস্থিতি গুরুতর রয়ে গেছে

নিরাপত্তা ও অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হোন

-

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বরাবরের মতো বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর প্রকাশিত ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে অন্য সব গুরুতর মানবাধিকার পরিস্থিতির সাথে এবার যুক্ত হয়েছে, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে জনগণের সক্ষমতা না থাকা। আগের বছরগুলোর তুলনায় গত বছর বিচারবহির্ভূত হত্যা কমে এলেও পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক থেকে গেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, যেকোনো ধরনের নির্যাতন করে সরকারি বাহিনীর কেউ বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে না। শত শত মানবাধিকারের ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের তদন্ত বিচারের উদ্যোগ নেই। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেকোনো সময় আবার বেড়ে যেতে পারে। জনসাধারণ এ ধরনের রাষ্ট্রীয় অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার আদায় করতে পারবে না।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনে গত বছর ১২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার খবর উঠে এসেছে। এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে আগের বছরগুলোর মতোই প্রতিকার পাওয়া যায়নি। গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সরকার এক ধরনের দায়মুক্তি দিয়ে রেখেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশী বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখা হয়েছে। নিষ্ঠুর নির্যাতন, অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ ও শাস্তির শিকার হয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে নাগরিক সাধারণের। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা বিচার প্রশাসনে আশ্রয় না পাওয়ার চিত্রও উঠে এসেছে। জাতীয় নিরাপত্তাসহ অন্য যেকোনো অভিযোগে তারা আটক হন। বিচারপ্রক্রিয়ায় তাদের দ্রুততার সাথে শাস্তি পেতে দেখা যায়।
দেশের দুই প্রধান নেত্রী বিচারব্যবস্থায় দুই ধরনের মূল্যায়ন পেয়েছেন। প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রীকে উপর্যুপরি শাস্তি ও গৃহবন্দী করে রাখার বিপরীতে সরকারি দলের প্রধান নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে খালাস করে দেয়ার উদাহরণ দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী নেত্রীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সপক্ষে জোরালো তথ্য প্রমাণ হাজির করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর সমস্যা আছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। মিডিয়া খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে স্ব-আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। এমনকি সামাজিকমাধ্যমেও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে নাগরিক সাধারণ চাপের মধ্যে রয়েছে। সরকারের লোকেরা সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত। এ ধরনের খবর ছাপানো সরকার নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে। তাই সরকারকে মিডিয়ার ওপর ঘন ঘন হস্তক্ষেপ করতে হয়। এজন্য মিডিয়াও সরকারের মন বুঝে রেখে ঢেকে চলে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও আইনকানুন ও বিচারব্যবস্থা ব্যবহার করার বহু নজির এখানে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নিয়ে বলা হয়, এই আদালত মৃত্যুদণ্ডসহ শাস্তি দিয়েই যাচ্ছে। এর শিকার হচ্ছে একচেটিয়া বিরোধীরা। কার বিচার হবে সেটা বাছাই করার পেছনে সরকারের ইশারা প্রাধান্য পায়। একটানা শাসনে সরকার অনেক বেশি কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠেছে, সেটাই মানবাধিকার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর আগের প্রতিবেদনে সাধারণত বিচারবহির্র্ভূত হত্যা, গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা হলেও দেশের মানুষ যে এখন সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতাও হারিয়েছে সেটা মানবাধিকার প্রতিবেদনে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখন সবচেয়ে সমালোচিত একটি রাষ্ট্র। মূলত গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে তাদের দ্বিমুখী নীতি দেখা যায়। সম্প্রতি তারা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা নিয়ে আনা জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়েছে। তারা আমাদের দেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়েও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেবে না। কিন্তু মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে। আমরা মনে করি, এই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। হারিয়ে ফেলা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। না হলে, নাগরিক নিরাপত্তা যে কারো যেকোনো সময় বিঘœ ঘটতে পারে। সবার নিরাপত্তা হারিয়ে যেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement