১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
মাদক সম্রাটদের অর্থবিত্ত বাড়ছে

কাজে আসেনি জিরো টলারেন্স নীতি

-

মাদক চোরাকারবারির বিরুদ্ধে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রায়ই তাদের কার্যক্রমের বিপুল ফিরিস্তি দিয়ে থাকে। মাদক জব্দ, চোরাকারবারি আটক, চিরুনি অভিযান, সবসময় আমরা এসব বিষয় খবর পাই। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করে সাংবাদিকদের ডেকে জাতির সামনে তাদের সাফল্য প্রচার করা হয়। মিডিয়াও ব্যাপক কাভারেজ দেয় তাদের কার্যক্রমের। দেশের মাদকের ব্যবহার ও মাদক সম্রাটদের বাড়বাড়ন্ত দেখলে তখন প্রশ্ন জাগে- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এসব কার্যক্রমের আসল বাস্তবতা নিয়ে। এমনো মাদক কারবারি আছে যাকে সারা দেশের মানুষ চেনে। তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তার কিছুই হয় না। এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে খবর দিচ্ছে তাতে বোঝা গেল, বিগত বছরগুলোতে মাদক কারবারিদের সম্পত্তি বেড়েছে।
খবরে জানা যাচ্ছে, মাদক কারবার চালিয়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন অনেকে। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা জমিয়েছেন। প্রাসাদোপম অট্টালিকা বানিয়েছেন বসবাসের জন্য। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে ঘটা করে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে আমরা মাদকের বিরুদ্ধে বড় বড় অভিযান দেখেছি। যৌথবাহিনী গঠন করে দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান চালানো হয়েছে। টেকনাফসহ কিছু এলাকাকে মাদক চোরাচালানের ঘাঁটি বলে চিহ্নিত করে আলাদা করে অভিযান চালানো হয়েছে। কথিত চোরাকারবারিদের একটি অংশ এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে। হত্যার শিকার কথিত চোরাকারবারির সংখ্যা শতাধিক।
এ অবস্থায় প্রশ্ন জাগে- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওইসব অভিযান প্রকৃতপক্ষে কাদের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে? সত্যিকার অর্থে এনকাউন্টারে চোরাকারবারি হত্যা কিংবা বিচারের মুখোমুখি হলে যারা ফুলেফেঁপে উঠেছে মাদক কারবারি করে, তারা কারা? যেকোনো অপরাধ সমাজ থেকে নিশ্চিহ্ন হয় তার উপযুক্ত শাস্তি হলে। এ ক্ষেত্রে এনকাউন্টারের ঘটনাগুলোকে বুস্টার ডোজ বলা যায়। এতে একজন মাদক চোরাকারবারি মারা যাওয়ার পাশাপাশি বিচারের মুখোমুখি হলে নতুন করে কেউ এতে যোগ দেবে, তার সম্ভাবনা কমে যায়। কারণ মৃত্যু পরোয়ানা হাতে নিয়ে কেউ মাদক ব্যবসায় করতে আসবে না। আমরা দেখেছি, টেকনাফের এক ওসি প্রদীপ কুমার কয়েক ডজন মানুষকে এনকাউন্টারে দেন। এদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরে দেখা গেল, এর বেশির ভাগ মানুষের সাথে কোনো ধরনের অপরাধের সম্পর্ক ছিল না। ওইসব মানুষ হত্যার মামলায় প্রদীপের বিচার চলছে।
৩৫টি মামলায় সিআইডির তদন্তে দেখা যাচ্ছে, কয়েকটি মাদক সিন্ডিকেটের হাতে ১৭৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। এমন সময় এদের সম্পদ অস্বাভাবিক বেড়েছে যে সময়টিতে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে; ক্রমাগত মাদকের বিরুদ্ধে একের পর এক সরকারি অভিযান চলেছে। তদন্তে সিআইডি ১২ জন গডফাদারের নাম প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে দু’জন কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির আপন দুই ভাই রয়েছেন। এদের সহযোগী হিসেবে পাওয়া গেছে, পরিবার, আত্মীয় ও প্রতিবেশী। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যেকটি অভিযানের সময় যেভাবে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করেছে, সেগুলো সত্যি হলে এত দিনে দেশ থেকে মাদক উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার কথা। বাস্তবতা হচ্ছে, ভারত ও মিয়ানমার দুই সীমান্ত দিয়ে মাদক চোরাচালান কমেনি; মাদক সম্রাটদের দৌরাত্ম্য কমেনি; দেশে মাদকের ছোবল স্তিমিত হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আগের মতোই মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা জোর দিয়ে ঘোষণা করছেন। এ অবস্থায় জনমনে কী ধারণা হবে? এবার কি সত্যিকার অর্থে, মাদক কারবারিদের ব্যবসায় কমবে? না আগের মতোই থেকে যাবে দেশে মাদকের সয়লাব?


আরো সংবাদ



premium cement