১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বিক্ষোভে উত্তাল বুয়েট

ছাত্ররাজনীতিতে আপত্তি

-

বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি এখন ঘৃণিত। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি কল্যাণকর হতে পারে কেউ বিশ্বাস করেন না। বর্তমান সরকারের আমলে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের কর্মকাণ্ড এ জন্য দায়ী। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যা। একজন সহপাঠী প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্কের ন্যায্যতা নিয়ে কথা তোলায় তাকে পৈশাচিকভাবে খুন করা হয়। অথচ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তাকে সমর্থন ও সাধুবাদ জানানোর কথা ছিল। তা না করে একে দেখা হয়েছে আদর্শিক বিরোধ হিসেবে। সুনির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয়; রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থের হাতিয়ার হিসেবে। রাজনীতিতে উপরে ওঠার সিঁড়ি এখন খুন সন্ত্রাস ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে যে যতটা পারঙ্গম উচ্চ পদ বাগানো তার জন্য তত সহজ হয়।
সম্প্র্রতি ছাত্ররাজনীতির বিরোধিতায় বুয়েট ফের উত্তাল। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কতটা ভীতি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়েছে এই আন্দোলন তার প্রমাণ। মূলত আবরার ফাহাদের পৈশাচিক হত্যার সময় বুয়েট শিক্ষার্থীরা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। ওই সময় সংবাদমাধ্যমে ছাত্ররাজনীতির নামে চলা যেসব কুকীর্তি ফাঁস হয়েছে; তা গা শিউরে ওঠার মতো।
ফাহাদের আত্মত্যাগ বুয়েট শিক্ষার্থীদের এক ধরনের মুক্তি দেয়। তারা ক্যাম্পাস ও হলে চেপে বসা রাহুর গ্রাস থেকে মুক্তি পান। সে জন্য তাদের ওই সময় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়েছিলেন বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ। সবার সম্মিলিত গর্জনে দখলদাররা ক্যাম্পাস থেকে হটে যেতে বাধ্য হয়। সম্প্রতি গভীর রাতে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করে ক্যাম্পাসে একত্রিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি চালুর পাঁয়তারা করেন। এ অবস্থায় আবারো শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, বুয়েটকে ফের আবরার ফাহাদ পূর্ববর্তী সময়ে ফিরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের কোনো স্বাধীনতা থাকবে না। আছে খুন, চাঁদাবাজি, নির্যাতিত হওয়া ও অপমান লাঞ্ছনার শঙ্কা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস মুক্ত করতে পাঁচ দফা দাবি পেশ করেছেন। নতুন করে রাজনীতির ইন্ধনদাতা ছাত্রলীগের নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, তার সাথে জড়িত থাকা আরো পাঁচ ছাত্রকেও বহিষ্কার, জড়িত অন্যদের শনাক্ত করা, গভীর রাতে যারা ক্যাম্পাসে অবৈধ কর্ম করতে সুযোগ করে দিয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালককে পদত্যাগ ও আন্দোলনরত ছাত্রদের কোনো রকম হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি চান। ছাত্রদের এসব দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক।
উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায়ই দেখা যায়, ছাত্রলীগের সদস্যরা যারা অপরাধ করছেন; তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এমনকি থানা পুলিশও চুপ। অন্যদিকে যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন; কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হচ্ছেন। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। কিন্তু এ আন্দোলন ব্যর্থ করতে একে জঙ্গিকর্ম বলে ট্যাগ দেয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে ট্যাগের এ রাজনীতি বহু করুণ পরিণতির জন্ম দিয়েছে। বহু ভালো উদ্যোগ এভাবে তকমা দিয়ে দমিয়ে দেয়া হয়েছে। ভালো কিছু করতে গিয়ে ছাত্রলীগের পীড়নের শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এ ধরনের মন্দকর্ম এভাবে চলতে পারে না। এখন সময় এসেছে, যারা মন্দ উদ্দেশ্যে তকমা এঁটে দেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কোনো কল্যাণকাজে আলোচিত নয়। প্রতিনিয়ত তারা খবর হচ্ছে অপকর্মের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পণবন্দী করে বাণিজ্যে নেমেছে তারা। বুয়েটকে ছাত্রলীগের অপকর্ম থেকে রক্ষায় আবরার ফাহাদের জীবন গেছে। এর বিনিময়ে বুয়েটে শিক্ষার পরিবেশ এখনো বজায় রয়েছে। এ অবস্থায় এখানে ছাত্রলীগকে আবার রাজনীতি করতে দেয়ার মানে; ফের বিপদ ডেকে আনা।


আরো সংবাদ



premium cement