১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
এক-তৃতীয়াংশ প্রাইমারিতে প্রধান শিক্ষক নেই

প্রাথমিক শিক্ষার নমুনা!

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের চাটমোহর (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, চাটমোহরের ১৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৩টি চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই। ৪৩টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ৪৩ সহকারী শিক্ষক। সহকারী শিক্ষকের ৮৩টি পদও শূন্য দীর্ঘদিন। এ অবস্থা চলতে থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, পাবনার চাটমোহরে পুরনো ৯০টি এবং সদ্য সরকারি ৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ১১৬ জন শিক্ষকের পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মামলাজনিত জটিলতা থাকায় শূন্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না। ২৩টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ৪৩ জন সহকারী শিক্ষক। আর সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদ ৮৩টি। উপজেলার রায়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম জানান, প্রাক-প্রাথমিকসহ ছয়টি শ্রেণীতে পাঠদান করি আমরা। প্রতিদিন ৩৫টি ক্লাস। সর্বশেষ, নিয়োগের সময়ে বিদ্যালয়টিতে চারটি পদ শূন্য থাকলেও মাত্র একজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। অল্প কিছু দিন পরই অন্য চাকরি হওয়ায় তিনিও চলে যান। ছয়টি পদ থাকলেও বর্তমানে এ স্কুলে কর্মরত আছেন কেবল দু’জন শিক্ষক। ক্লাসে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হওয়ায় কয়েক দিন আগে একজন শিক্ষককে এখানে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছে। সাড়ে সাত বছর ধরে এ স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে দেখেছি, অর্ধেক পদ সব সময়ই ফাঁকা।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক রকিবুল ইসলাম জানান, ছয় পদের বিপরীতে এতদিন দু’জন শিক্ষক কর্মরত থাকায় (প্রধান শিক্ষকসহ) প্রতিদিন প্রায় ১৫টির অধিক ক্লাস নিতে হতো একজন শিক্ষককে। প্রধান শিক্ষক অফিসিয়াল কাজে কোথাও গেলে একাই স্কুলের ছয়টি শ্রেণীর সব ক্লাস চালাতে হয়। সম্প্রতি ডেপুটেশনে একজন শিক্ষক পাওয়ার পরও অর্ধেক পদ ফাঁকা। এতে ক্লাস চালিয়ে যাওয়া আমাদের পক্ষে খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
হান্ডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলম জানান, নিয়মিত প্রধান শিক্ষক অথবা চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষককে অনেক সময়ই অফিসিয়াল কাজে উপজেলা সদরে গমন করতে হয়।
এ ছাড়া প্রশিক্ষণ গ্রহণকালীন অনেক শিক্ষকের পক্ষে স্কুলে পাঠদান করানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। স্থানীয় অনেক স্কুলেই শিক্ষক সঙ্কটে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অভিভাবকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ছাত্রছাত্রীদের পাঠ গ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক সঙ্কটের কারণে অনেকে সন্তানকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি না করে স্থানীয় কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার মাহবুবুর রহমান জানান, কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষক সঙ্কট প্রকট। ফলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। কর্তব্যরত শিক্ষকরা কষ্ট করে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালনকারী সহকারী শিক্ষকরা আর স্বপদে ফিরবেন না। তাদের পদোন্নতি দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে বহাল রাখা হবে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি, জুন মাসের দিকে এ সঙ্কট আর থাকবে না। সারা দেশের চালচিত্র মোটামুটি অভিন্ন। প্রাইমারি স্কুল হচ্ছে শিক্ষার ভিত্তি। এমন অবস্থা বজায় রেখে কোনোদিন এর লক্ষ্যে পৌঁছা যাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement