১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগে ভাটা

ব্যাংকঋণ বিতরণ বাড়াতে হবে

-

শুধু জাতীয় পর্যায় নয়, পল্লী এলাকাতেও ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। এর প্রধান কারণ, গ্রামে অবকাঠামোগত সুবিধার অভাব। শহরে যে হারে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয়, গ্রামে ততটা দেয়া হয় না। এছাড়া বিনিয়োগকারীদেরও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের অনীহা আছে। উদ্যোক্তার অভাব তো আছেই। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে।
পল্লী এলাকায় ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর এমনিতে অনীহা থাকে। তার ওপর খেলাপি ঋণের চাপে কোনো কোনো ব্যাংকঋণ বিতরণ পুরোপুরি বন্ধ রাখে। ফলে যে হারে বিনিয়োগ হচ্ছিল তাতে ভাটা পড়ে। আবার পল্লী এলাকায় যাকে ঋণ দেয়া হবে, তার কাছ থেকে ঋণ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকলে পুরো ঋণ ঝুঁকিতে পড়ে যায়। এসব কারণে পল্লী এলাকায় ঋণ বিতরণে ঋণাত্মক প্রভাব পড়ছে। তবে গ্রামীণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, ব্যাংক থেকে আর আগের মতো বিনিয়োগসুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। আগে যেখানে ব্যাংকে গেলে যেভাবে সাড়া মিলত, এখন বিনিয়োগ না দিতে নানা অজুহাত দেখানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানের বরাতে নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এ খাতে (নন-ফার্ম রুরাল ক্রেডিট) বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক প্রায় ৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে এ খাতে বিনিয়োগ দেয়া হয়েছে দুই হাজার ৯২০ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল তিন হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। এ খাতে প্রকৃত বিনিয়োগ কমেছে ২৫৩ কোটি টাকা।
বিনিয়োগ কমার পাশাপাশি গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আদায়ও তেমন একটা হয়নি। চলতি বছরের সাত মাসে পল্লী এলাকার শিল্প ঋণ আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ শতাংশের কম, অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
পল্লী এলাকায় ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার অন্যতম কারণ- অনেক উদ্যোক্তা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এলাকাছাড়া হয়েছেন। অনেকে ব্যবসায়-বাণিজ্য গুটিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। এসব কারণে পল্লী উদ্যোক্তা অনেকে ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে পারেননি, কেউবা ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের মধ্যে গ্রামীণ এলাকার ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগ বেশি কমেছে গত ডিসেম্বরে। ওই মাসে এ খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক- প্রায় ৬৭ শতাংশ। আগের বছরে ডিসেম্বরে যেখানে বিনিয়োগ ছিল ৭০৭ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বিনিয়োগ হয়েছে ৪২৪ কোটি টাকা। একইভাবে নভেম্বরে এ খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক- ৪৮ শতাংশ। অক্টোবরে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগের ঋণাত্মক হয়েছে।
বেশির ভাগ ব্যাংকের ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ গ্রামীণ এলাকার চেয়ে জাতীয় পর্যায়ে ঋণ বিতরণে বেশি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো- তহবিল সঙ্কট। আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবাহ কমে গেছে। কিন্তু বিনিয়োগ থেকে আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। গ্রামীণ বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে।
গ্রামীণ জনপদে ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হওয়ায় মানুষ কর্মসংস্থানের আশায় শহরমুখী হচ্ছে। এতে করে শহরে চাপ বাড়ছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে গ্রামে ঋণ বিতরণ বাড়াতে ব্যাংকগুলোর মনোযোগী হওয়া দরকার। তা হলে আশা করা যায়, গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। বেকারত্বের হারও কমবে।


আরো সংবাদ



premium cement