প্রতিষ্ঠিত মিল এ অবস্থায় কেন?
- ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৫
একটি সহযোগী জাতীয় দৈনিকের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, টানা লোকসানের বোঝা, অর্থসঙ্কট আর দেনার দায়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ৬০ বছরের পুরনো চিনিকল। তিন মৌসুম আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ চিনিকলটিতে। ২০০১-০২ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম চিনিকলটিতে লোকসান ৪৬১ কোটি টাকা। কলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন ওই শিল্পের সাথে জড়িত কৃষক শ্রমিকরা। বিনষ্ট হওয়ার পথে চিনিকলের মেশিনারিজসহ শত কোটি টাকার স্থাপনা। বকেয়া রয়েছে অবসরপ্রাপ্তদের গ্র্যাচুইটি। কর্তৃপক্ষ বলেছিল, অন্য কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আশ্বাসের সাথে বাস্তবতার মিল নেই।
কুষ্টিয়া চিনিকলে ২০২০-২১ মৌসুম থেকে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এর দৈনিক মাড়াই ও উৎপাদন ক্ষমতা দেড় হাজার মেট্রিক টন ও বার্ষিক মাড়াই ক্ষমতা ১৫ হাজার মেট্রিক টন। বন্ধের তিন বছর পরও মিলটি চালু করতে সরকারি উদ্যোগ না থাকায় ‘মিলজোনের’ আওতায় আখ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। মিলের শতাধিক কোয়ার্টার পরিত্যক্ত। বাউন্ডারি ঘেরা মিলের জায়গা ঘাস, লতা-পাতা ও গুল্মে সয়লাব। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মিল ভবন ও টিনের ছাউনি এবং অন্যান্য স্থাপনা, আখ পরিবহনে ব্যবহৃত ১৫-২০টি লরি, সুউচ্চ চিমনি, ভারী মেশিনারি ও বৈদ্যুতিক মোটরসহ শত কোটি টাকার যন্ত্র বিনষ্টের উপক্রম। চিনিকলের বেশির ভাগ জমি চাষাবাদের জন্য লিজ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিকে লিজ গ্রহীতারা বিভিন্ন ফসল চাষ করলেও আখ চাষ বাধ্যতামূলক করেছে কর্তৃপক্ষ।
জনবল কাঠামো অনুুযায়ী, কুষ্টিয়া চিনিকলে এক হাজার ৭৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ২৬ জন কর্মচারী মিল রক্ষায় নিয়োজিত। চিনিকল বন্ধ হওয়ার পরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যান্য চিনিকলে সংযোজন করা হলেও সব থেকে বিপদে পড়েন ‘কাজ নেই পারিশ্রমিক নেই’ শ্রমিকরা। জেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে জগতি নামক স্থানে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুষ্টিয়া সুগার মিল। ১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে এটি চিনি উৎপাদন শুরু করে। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ঘোষণা করে।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠার পর থেকে জগতিসহ আশপাশের এলাকার জীবিকার মান পরিবর্তন হতে থাকে। চিনির কাঁচামাল আখ। জেলাজুড়ে জমিতে সেই আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হওয়ায় জগতির আশপাশে মানুষের বসতি বাড়তে থাকে। সুগার মিলকে ঘিরেই সেই সময় পাশেই গড়ে ওঠে ‘বিআইডিসি বাজার’। এলাকাটি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। এখন এই শিল্প ধ্বংসের পর মানুষের দুর্দশাও বাড়ছে।
বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় চাষি পর্যায়ে আখ চাষ হতো সাত হাজার ৯৯৩ একর জমিতে। ১৪০ টাকা দরে চাষিরা মিলে আখ সরবরাহ করতেন। কুষ্টিয়া সুগার মিলকে কেন্দ্র করে আখ চাষ বাড়তে থাকে। সে সময় আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হতো। বিক্রীত আখের দাম পরিশোধে দীর্ঘসূত্রতাসহ হয়রানি ও জটিলতায় চাষিরা মিলে আখ সরবরাহে আগ্রহ হারান। মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে কুষ্টিয়া জোনের আওতায় চাষকৃত আখ মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর ও দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোং চিনিকলে সরবরাহ করার কথা থাকলেও আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা।
স্থানীয় মানুষ আখ কলটি আবার চালু হওয়ার প্রত্যাশা রাখেন। এটি চালু হলে আবারো এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি পাবে। আমরা মনে করি, আখ কলটি নিয়ে সরকার নতুন করে চিন্তাভাবনা করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা