দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই
- ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৫
‘বিশ্ব নদী দিবস’ সংবাদমাধ্যমে ভালো কাভারেজ পেয়েছে। বেশির ভাগ খবরে বলা হচ্ছে- দখল দূষণ ও কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার শিকার বাংলাদেশের নদ-নদী। সরকারের কাছে এখনো এই তথ্য নেই যে, প্রকৃতপক্ষে দেশে কতটি নদ-নদী রয়েছে। তালিকা হয়েছে অনেক, একটি তালিকাকেও সঠিক বলা যাচ্ছে না। এদিকে কাগজ-কলমে নদী রক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। উচ্চ আদালতের কয়েক দফায় দিকনির্দেশনামূলক আদেশ আছে; বাস্তবে বাস্তবায়ন নেই। যেই সময়ে পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতার বাগাড়ম্বর চারদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সে সময়ে চলেছে দখল ও দূষণের উৎসব। সীমান্তের বাইরে থেকে অন্যায্যতার শিকার হওয়ার পরে দেশের ভেতরে একইভাবে অবহেলা-অনাদরে পড়ে আমাদের বেশির ভাগ নদ-নদীর যেন এখন মরণদশা।
ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীর কাছে নদী একটি ভাগবাটোয়ারার বিষয়। সারা দেশে নদীকে বালু উত্তোলন, বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের বানানো, দখল করে ভবন নির্মাণের একটি সস্তা উৎস হিসেবে দেখা হয়। নদী থেকে বালু তোলার একটি সহনীয় নিয়ম রয়েছে। স্রোতধারা ও তার পাড় নিরাপদ রেখে এ কাজ করতে হয়। দেখা যাচ্ছে, নিষেধ থাকার পরও ড্রেজার ও পাওয়ারপাম্প দিয়ে নদ-নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। দেশে সরকারি বালুমহালের সংখ্যা ৭০৭টি, স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর বাইরে আরো বহু বালুমহাল বানিয়ে নিয়েছে।
যারা একটু বেশি ক্ষমতা রাখেন; তারা নদীতে বাঁধ দিয়ে ইচ্ছেমতো স্রোতধারা নিয়ন্ত্রণ করেন। যারা আরো বেশি ক্ষমতাধর তারা রীতিমতো নদীগুলো খেয়ে ফেলছেন। এর মধ্যে এমনও রয়েছে, যারা চেনাজানা বড় বড় নদী খেয়ে ফেলছেন। এমনই একটি বড় শিল্পোদ্যোগ দেখা গেল কর্ণফুলী তীর দখল করে। আনোয়ারা উপজেলার সাগরের মোহনা থেকে দুই কিলোমিটার উজানে ‘ড্রাইডক’ নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি পত্রিকা এক রিপোর্টে দেখিয়েছে, কিভাবে আদালতের আদেশ অমান্য করে নদীর স্রোতধারায় বাধা দিয়ে এর পাড়কে বাণিজ্যিক কাজে লাগানো হচ্ছে।
এক পাশে যখন ড্রাইডক নির্মাণের কাজ চলছে অন্য পাশেও নানা স্থাপনা নির্মাণ করে চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদীটি দখলের মহড়া চলছে। ওই পয়েন্টে নদীটি সঙ্কুচিত হয়ে এখন ৪৫০ মিটারের কিছু বেশি প্রস্থ, অথচ এখানে নদীটি এক হাজার মিটার প্রস্থ ছিল। সারা দেশে এমন দখলদাররা বিনাবাধায় নদীকে খুন করছে। নদীদূষণের কাজটিও প্রভাবশালীরা চালাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকা এবং সারা দেশে বাণিজ্যিক এলাকার পাশ দিয়ে যাওয়া নদীগুলোকে রাসায়নিক বর্জ্য ফেলে শেষ করে দেয়া হচ্ছে। এসব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত খবর ছাপা হলেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।
‘নদী রক্ষা কমিশন’ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত। সংস্থাটির ওপর বড় দায়িত্ব চাপানো হয়েছে, কিছু ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু নেপথ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় প্রতিষ্ঠানটির আদৌ কোনো যোগ্যতা আছে কিনা সেটিও যাচাই করা যায়নি। দখল-দূষণ রোধ এবং নদীতে যেকোনো ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধে স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকতে হবে।
দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক জোর খাটানোর প্রধান হাতিয়ার। যার ‘মামার’ জোর যত বেশি অন্যায় করার ক্ষমতাও তার তত বেশি। দেশের নদীগুলো মরে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে হলে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ও আইন অনুযায়ী তার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ করে দিতে হবে। পরিস্থিতি যেভাবে এগুচ্ছে, অচিরেই দেশের অনেক নদ-নদী হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা জাগে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা