সংশ্লিষ্ট সবাই নির্বিকার
- ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৫
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। এখন প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। বাড়ছে প্রাণহানিও। স্পষ্টত ডেঙ্গু রোগীর ঢেউ সামাল দেয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৫। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৪ হাজার ৯৭৬ এবং রাজধানীর বাইরে ৯৮ হাজার ৮১৯। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৪৬ জন। এমন পরিসংখ্যান বলে দেয়, এখন ডেঙ্গু আর সামাল দেয়া যাচ্ছে না। তবু সরকারের কোনো হেলদোল নেই।
দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের বড় প্রাদুর্ভাব হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৯৩ জনের মৃত্যু হলো। এর পর থেকে প্রতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। গত ২২ বছরের মধ্যে বেশির ভাগ বছরে ডেঙ্গুতে কমবেশি মৃত্যু হয়েছে। গত ২২ বছরে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু (২৮১ জন) রেকর্ড হয়েছিল। চলতি বছর অনেক আগে ওই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের, ২০২১ সালে ১০৫ জনের। দেশে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৮৫৩ জন। আর চলতি বছর গত বুধবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ৮৬৭ জনের।
এই মাসের শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, ডেঙ্গু বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে তীব্র চাপে ফেলেছে। অর্থাৎ গোটা চিকিৎসাব্যবস্থা ডেঙ্গু সামাল দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আগস্টেও বিশ্ব সংস্থাটি উদ্বেগের সাথে জানিয়েছিল, আমাদের দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারী পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে। খুব দ্রুত বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলেছিল সংস্থাটি। পরামর্শ ছিল, কালক্ষেপণ না করে মশকনিধনে অবিলম্বে সমন্বিত কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
এবার ডেঙ্গু যে বাড়বে, তা কিন্তু বছরের শুরু থেকে বোঝা যাচ্ছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এডিস মশার লার্ভা বা শুককীট জরিপ করে। বছরের শুরুতে সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়েছিল, এবার লার্ভার পরিমাণ যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এ কথার অর্থ হলো- এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আগের চেয়ে বেশি হতে পারে। সেই শঙ্কা বাস্তবে পরিণত হয়েছে বেশ কয়েক মাস ধরে। কিন্তু এডিশ মশার প্রজননস্থল এবং মশকনিধনে সময় থাকতে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলো তেমন গা করেছে বলে দেখা যায়নি। ফলে এই গাফিলতির খেসারত এখন দিতে হচ্ছে দেশের জনগণকে। লক্ষণীয়, সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে- এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে বেশি। অর্থাৎ ডেঙ্গু এখন আর ঢাকাকেন্দ্রিক নেই, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। একই সাথে এটি মৌসুমি রোগও নেই। সারা বছর এতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
এবার হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া ডেঙ্গু রোগীর অর্ধেকের বেশি মারা গেছেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এক দিনের মধ্যে। আর রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যুর বিষয়টি উদ্বেগজনক। এখন মৃত্যু যদি কর্তৃপক্ষের গা সওয়া হয়ে যায়, তা হবে দুঃখজনক। এ অবস্থার পরও ডেঙ্গুকে এখনো কেন জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা হিসেবে সরকার বিবেচনা করছে না; তা কারো কাছে বোধগম্য নয়।
জনস্বাস্থ্যবিদদের মতো আমাদের সবার জানা, এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকানো যাবে না। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ। বিভিন্ন দফতর, সংস্থা ও নাগরিকদের সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া সেটি সম্ভব নয়। এর জন্য কি সরকারের কোনো কর্মকৌশল আদৌ আছে? আসলে সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো ডেঙ্গু রোধে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, জনস্বাস্থ্য নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলো নির্বিকার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা