১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

কর্তৃপক্ষের জোরদার ব্যবস্থা নেই

-

দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে দুই দশকের বেশি সময় ধরে। এখন এটি শুধু মৌসুমি কোনো রোগ নয়, আবার ঢাকাকেন্দ্রিকও নয়। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ডেঙ্গু এখন শুধু রাজধানীর সমস্যা নয়; সারা দেশের সমস্যা। এটি শুধু বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ের সমস্যাও এখন আর নেই। তাই এখন থেকেই বছরব্যাপী ও দেশব্যাপী উদ্যোগ নিতে হবে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতে পারে। একই সাথে এর প্রতিরোধে চিরাচরিত পদ্ধতি পাল্টে নতুন ধারা সৃষ্টি করতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ে এখন নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে।
তবে বাস্তবতা হলোÑএই রোগ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এ কথা বলার কারণÑ চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর এ মাসের প্রথম আট দিনে আটজনের মৃত্যু হলো।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বর্তমানে দেশে মোট ৫০৬ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৩৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬৯ জন রয়েছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত দুই হাজার ৮৫৪ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার দুই হাজার ১১৯ জন এবং ৭৩৫ জন ঢাকার বাইরের। এসব তথ্য থেকে এটিই প্রতীয়মান হয়, এবার বর্ষা মৌসুমের আগে থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে।
২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। ওই বছর ডেঙ্গুতে মারা যান ৯৩ জন। এরপর ডেঙ্গুর সবচেয়ে বড় প্রকোপ দেখা দেয় ২০১৯ সালে। ওই বছর মারা যান ১৭৯ জন। আর আক্রান্ত হন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। করোনা মহামারী শুরুর বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে মারা যান সাতজন এবং তার পরের বছর মারা যান ১০৫ জন। তবে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা গেছেন গত বছর। গত বছর ২৮১ জন মারা গেছেন।
লক্ষণীয়, গত ২২ বছরের ডেঙ্গুর অভিজ্ঞতা হলোÑ আগাম বৃষ্টি হলে ডেঙ্গু একটু আগে শুরু হয়। শেষ হয় তাড়াতাড়ি। আবার দেরিতে বৃষ্টি হলে ডেঙ্গুর বিস্তৃতি আরো বাড়ে। তবে কমবেশি অভিজ্ঞতা হলো, বৃষ্টির মৌসুমে অর্থাৎ জুন থেকে প্রকোপ বাড়তে থাকে। আর তা সেপ্টেম্বরের দিকে কমে আসে।
ডেঙ্গু মশাবাহিত ভাইরাসজনিত একটি রোগ। এটি বহন করে এডিশ প্রজাতির মশা। আর এ ভাইরাস ছড়ায় যখন একটি এডিস মশা রোগীকে কামড়ায়, তখন সেই মশা ভাইরাসটি নিয়ে নেয়। ভাইরাসটি মশার শরীরে থেকে যায়। যখন সেটি ডিম পাড়ে, তখন সব ডিম থেকে মশা হয় না। বৃষ্টি ও অনুকূল তাপমাত্রা সেখানে একটি বিচার্য বিষয় হিসেবে থাকে। তারপর যতগুলো ডিম থেকে বাচ্চা হয়, সেই মশা এ ভাইরাস বহন করবে। এগুলো যাকে কামড়াবে, তারই ডেঙ্গু হবে।
সঙ্গত কারণে এডিশ মশার নিয়ন্ত্রণই হলো ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানোর মোক্ষম উপায়। এ জন্য মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে প্রথমে। দ্বিতীয়ত, মশানিধন কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। এসব কাজ রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে সিটি করপোরেশন করে থাকে। আর জেলা শহরে পৌর কর্তৃপক্ষের করার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মশার প্রজননক্ষেত্র ও নিধন কর্মসূচিতে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হয় না।
আসলে মশানিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাব রয়েছে সারা দেশে। এখানে জনসম্পৃক্ততা দরকার। কিন্তু জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে সিটি করপোরেশনগুলো। বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। অথচ ডেঙ্গুর সংক্রমণ রাজধানী ঢাকাতে বেশি। এ ব্যর্থতার পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটি থেকে যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে মশানিধনে তা কতটুকু কার্যকর, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ডেঙ্গু যেহেতু এখন আর ঢাকাকেন্দ্রিক নেই; তাই সারা দেশে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে নিবিড় নজরদারি করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement