২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সরকারের সততার প্রমাণ দরকার

এবার চাতুরী কাজে আসবে না

-

কেউ স্বীকার করুন, না করুন- দেশ এখন রাজনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত। ২০১৪ সালের পর থেকে এর মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনীয় আসছে; এ সঙ্কট তত চরম আকার ধারণ করছে। এ জন্য সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা প্রধানত দায়ী হলেও এর ভুক্তভোগী জনগণ। তারা দীর্ঘদিন থেকে ভোটাধিকার বঞ্চিত। শুধু তাই নয়; এর ফলে সৃষ্ট জটিলতা সবার জীবনে নানা মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে হেলে পড়ায় সাধারণ মানুষ সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন। অন্য দিকে গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক দেশগুলো বন্ধুপ্রতিম একটি রাষ্ট্রে স্বেচ্ছাচারী জোর করে শাসন আর গ্রহণীয় মনে করছে না। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো শুধু জোর তাগিদ দিচ্ছে এমন নয় : এক ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে শুরু করেছে। এতেও নাগরিক জীবনে সঙ্কটের নতুন মাত্রার উদ্ভব হয়েছে। রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন এখন শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপির দ্বিপক্ষীয় বিষয় নয়; বরং পুরো জাতির প্রধান অ্যাজেন্ডা।

আমরা যদি সফল জাতিগুলোর ইতিহাস দেখি, দেখা যাবে সেখানে সাম্য-মৈত্রী ও সহাবস্থানের নীতি মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু বাংলাদেশে চলছে ঘৃণা হিংসা আর প্রতিশোধ গ্রহণের স্পৃহা। দিন যত গেছে বিভাজনের নীতি আমাদের সঙ্কট আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে এ নীতির জোরালো চর্চা করছে। বিরোধীদের দাবি-দাওয়া ও মতামতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষার নীতি নিয়েছে। দেশ পরিচালনায় বিরোধীদের অবস্থান ও অংশগ্রহণ একেবারে অস্বীকারের পাশাপাশি, অনুকূল বিশ্ব পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একচেটিয়া দমন নীতি গ্রহণ করেছে।
এখন বিভাজন ও দমননীতিতে দেশ আর চলছে না। বিরোধীদের সাথে সমঝোতা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। সরকারি দলের এক শীর্ষ নেতা বিএনপির প্রতি সংলাপের কথা বলেছেন। এই প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকারের আমলে আগের সংলাপের পরিণতি কী হয়েছে তা এখন সামনে চলে এসেছে। সবার জানা, দু’টি দলের মধ্যে সংলাপের জন্য একটি ভিত্তি প্রয়োজন। কিসের ভিত্তিতে প্রতিপক্ষকে আস্থায় আনা যাবে। অর্থাৎ বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮-এর জাতীয় নির্বাচন ঘিরে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে অনুষ্ঠিত সংলাপে বিরোধীরা শতভাগ প্রতারিত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে আপ্যায়িত করেছেন। কিন্তু তাদের কোনো দাবি কার্যে পরিণত করতে পারেননি। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্বাচন নিয়ে যেসব আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি দেন তার কোনোটি বাস্তবায়িত হয়নি।

২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের পর বলা হয়েছিল, এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। এক বছর পর আরেকটি নির্বাচন হবে। পরে দেখা গেল তার আর হয়নি। ফলে বিরোধীরা প্রতারিত হন। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন তার ওপর আস্থা রাখতে। অথচ ওই নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হয়ে যায়। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের আহ্বানে সংলাপে বিএনপির সাড়া দেয়ার কোনো বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে না। যদিও সরকারি দলের এক সদস্য সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন- এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি তা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছে। অন্য দিকে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ওই আহ্বানকে আহ্বানকারী নেতা নিজের ব্যক্তিগত মত বলছেন। দলের মন্ত্রীরা এ নিয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্য দিচ্ছেন।
দেশে যখন চরম রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে; তখন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজেরা একমত হতে পারছেন না। সরকারে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা আগের চেয়ে বাড়ছে। অথচ রাজনৈতিক সঙ্কটের সাথে দেশ নিপতিত হয়েছে চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থায়। এর উৎপত্তিও সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে এর সমাধান সম্ভব বলে মনে হয় না।
সরকার আগের মতো প্রতারণার নির্বাচনের দিকে হাঁটলে আমাদের অবস্থা ভয়াবহ হতে বাধ্য। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর আমেরিকা এখন ব্যাপকভিত্তিক ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এর আওতায় গতান্ত্রিক মূল্যবোধ যারা ক্ষতিগ্রস্ত করবেন তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেমে থাকবে না। এ কারণে সরকারের যেখানে একটি বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার; সেখানে এখনো বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে তোপ দাগিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ এই সঙ্কটময় অবস্থার পরিবর্তন চান। এ জন্য সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সততা সবার আগে প্রয়োজন। তারা এখন কথা-কাজে মিল দেখাবেন সেটি প্রত্যাশিত। সবাইকে আস্থায় নিয়ে ‘কানাগলি’ থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement