২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
উত্তরাঞ্চলের চা-শিল্পে সঙ্কট

সমস্যার সমাধান জরুরি

-

দেশের চা-শিল্পে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছিল উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় জেলা। ২০০০ সালের দিকে এখানে চায়ের চাষ শুরু হয়। লাভজনক হওয়ায় অনেকে চা বাগান তৈরি করে চাষাবাদ শুরু করেন। ক্রমে তা পঞ্চগড় ছাড়াও আশপাশের জেলা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এ অঞ্চলে প্রায় ১৩ হাজার একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। আগে চা চাষ শুধু সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় সীমিত ছিল। পঞ্চগড় প্রমাণ করেছে, সমতল ভূমিতেও চা উৎপাদন সম্ভব এবং লাভজনক। নতুন সম্ভাবনা দেখে শিল্পপতিরাও এগিয়ে আসেন। এখন পর্যন্ত সেখানে প্রায় ৩০টি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা। বহু মানুষ এখন নানাভাবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বছরে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় দুই কোটি কেজি চা, যা দেশে উৎপাদিত মোট চায়ের প্রায় ২০ শতাংশ। বাজার মূল্য আড়াই’শ কোটি টাকার বেশি।
কিন্তু গত ২৩ বছরে সমতল ভূমির এ শিল্পের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়নি। অন্য সব শিল্পের মতো এখানেও দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। চাষাবাদের ব্যয় বেড়েছে বিপুলভাবে। প্রতি বছরই বাড়ছে। আগের চেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে। সারের দামও অনেক বেড়েছে। খরার কারণে চা বাগানে সেচ দিতে হচ্ছে। এতসব ব্যয় বৃদ্ধির পরও বাড়েনি চা-পাতার দাম, বরং কমছে। চাষিরা যথারীতি বঞ্চিত হচ্ছেন। পাতার ন্যায্য দাম না পাওয়ার অভিযোগ করে চাষিদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে মিল মালিকদের সিন্ডিকেট। চাষিরা অভিযোগ করেন, উৎপাদন খরচ তিন গুণ বাড়লেও চা-পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। ১৮ টাকা কেজি দরে কাঁচা চা-পাতা কেনার কথা থাকলেও কারখানার মালিকরা একজোট হয়ে কিনছেন ১৩ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে। শুধু তাই নয়। পাতা বড় হয়ে গেছে এমন অজুহাতে দামের ৩০-৪০ শতাংশ কেটে রাখছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
সাধারণভাবে কারখানা বেশি হলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা। চা-পাতার দাম বেড়ে যাবার কথা। কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা। এর কারণ কারখানাগুলোর অনৈতিক যোগসাজশ। বাজারের নিয়ম লঙ্ঘন করে তারা দর নিয়ে কারসাজি করছেন। পরিস্থিতি এমন যে, ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ অনেক চাষি বাগানের চা-গাছ কেটে ফেলছেন। বলছেন, কত আর লোকসান দেবো!
অনেক চাষি ও বাগান মালিক তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। সম্প্রতি তারা চা বাগান মালিক সমিতির ব্যানারে পঞ্চগড়ে মানববন্ধন করেন। সেখানে চা চাষিদের অস্তিত্ব রক্ষায় কাঁচা পাতার দাম কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন ৪০ টাকা নির্ধারণ, পঞ্চগড়ে সরকারি চা কারখানা প্রতিষ্ঠাসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিস চাষিদের সমস্যার কথা স্বীকার করলেও এ দফতরের নিজের কিছু করার নেই। জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে চায়ের মান বাড়াতে চা বাগান মালিক ও কারখানা মালিকদের উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করে স্থানীয় অফিস। ছোট আকারের পাতা কারখানায় সরবরাহের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন দফতরের কর্মকর্তা। কিন্তু চাষিরা বলেন, তারা কারখানার কর্মকর্তাকে জানিয়েই পাতা তোলার কাজ শুরু করেন।
চা এখন আর কোনো শৌখিন পানীয় নয়। সমাজের একেবারে নিচের স্তর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সব মানুষের প্রতিদিনের এবং প্রতিবেলার নিত্যপ্রয়োজনীয় পানীয়ের রূপ নিয়েছে অনেক আগে। টেবিলে এক কাপ ধূমায়িত চা ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের কথা ভাবাও এখন অসম্ভবপ্রায়। রফতানি আয়ের কথা তো বলাই বাহুল্য।
সুতরাং চা-শিল্প বাঁচাতে হবে। এ জন্য এটিকে যেমন কারখানা মালিকের জন্য লাভজনক করতে হবে তেমনি লাভজনক করতে হবে বাগান মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই।


আরো সংবাদ



premium cement
চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০টি সহযোগিতা নথি সই ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’ মিলান ডার্বি জিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার ইন্টারের কুমিল্লা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক আহত অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর সাংবাদিকের বড় ভাই উদ্ধার

সকল