১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিস্তীর্ণ জলাধার বিলীন হয়েছে

বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে ঢাকা

-

আমাদের দেশের রাজধানী শহর ঢাকা পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে দ্রুত বাস উপযোগিতা হারাচ্ছে। নানা কারণ থাকলেও ঢাকার এ মরণদশার জন্য মূলত দায়ী অতিরিক্ত জনবসতি। আমাদের সব অর্থনৈতিক এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ঢাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠায় সারা দেশ থেকে মানুষ রাজধানীতে এসে বসতি গড়েছেন। সেই জনস্রোত অব্যাহত আছে। ফলে অপরিকল্পিতভাবে অবিশ্বাস্য গতিতে ঢাকার সম্প্রসারণ ঘটেছে এবং এখনো তা ঘটছে। এ কারণে এই নগরীর জলাভূমি দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। একই সাথে কমছে ব্যাপক হারে গাছপালা। নয়া দিগন্তে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একটি গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, গত ২৮ বছরে রাজধানীর সবুজ, জলাধার, জলাভূমি, উন্মুক্ত স্থান, গণপরিসর, পতিত জমি সবই ব্যাপক হারে কমেছে।
পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, একটি আদর্শ শহরে ১২ শতাংশ জলাভূমি ও ১৫ শতাংশ এলাকায় সবুজ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে রাজধানীর মাত্র ২ দশমিক ৯১ শতাংশ জলাধার ও ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ সবুজ রয়েছে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘২৮ বছরে রাজধানীর জলাধার ও সবুজ নিধন : বাস্তবতা ও উত্তরণের পথনকশা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোলটেবিলে বলা হয়েছে, গত ২৮ বছরে রাজধানী থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাধার উধাও হয়ে গেছে। এ সময়ে প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার সবুজ কমেছে। ১৯৯৫ সালে রাজধানীতে জলাধার ও জলাভূমি ছিল ৩০ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার। ২০২৩ সালে সেটি মাত্র ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নগর এলাকায় সবুজের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৭৮ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ১০ দশমিক ৪২ একরে নেমেছে। জলাধার ও জলাভূমি ৩০ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটার হয়েছে। ফাঁকা জায়গা ও পতিত জমিও কমেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়নে ঢাকার আজ এই করুণ অবস্থা। ভরাট-দখলদারিত্বের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে না পারলে ঢাকার বাসযোগ্যতা এখনো যা অবশিষ্ট আছে তা-ও দ্রুত কমে আসবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
মানুষ পরিবেশ দূষণ করে এবং মানুষই দূষণ প্রতিরোধ করতে পারে। তবে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ না হলে ঢাকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে না। এ জন্য ঢাকা শহরের সবুজ ও জলাভূমি রক্ষায় এই নগরে কত মানুষ বসবাস করবে তার একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকা প্রয়োজন। সীমার অতিরিক্ত মানুষের ঢাকায় বসবাস নিরুৎসাহিত করতে নানা ধরনের পরোক্ষ নীতিমালা নেয়ার সময় এসেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে মনে রাখতে হবে, ঢাকায় জনস্রোত ঠেকাতে শুধু কথামালা দিয়ে কাজ হবে না। এর জন্য ঢাকাসহ সারা দেশের উন্নয়নে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে নিয়ে যেতে হবে। যাতে সব শহর ও গ্রাম-গঞ্জে কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়। এ ছাড়া যেসব শিল্প-কারখানা রাজধানীতে রয়েছে তা সরিয়ে বিভাগীয়সহ অন্যান্য জেলা শহরে স্থানান্তর করা যেতে পারে। একই সাথে ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকার বাইরের শহরগুলোতেও গড়ে তুলতে হবে। আর জেলা সদরের হাসপাতালগুলোর আধুনিকায়ন করা হলে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য মানুষকে ঢাকায় ছুটে আসতে হবে না। এ কাজগুলোর বিষয়ে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের গুরুত্ব দিতে হবে। আর এসব যদি বাস্তবায়ন করা না হয়, তা হলে ঢাকায় অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ঠেকানো যাবে না। যেহেতু এখানো পর্যন্ত ঢাকা মহানগর বাংলাদেশের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু। সেহেতু বসবাসযোগ্য ঢাকা অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য এবং রাজধানী ঢাকা না বাঁচলে আমাদের অর্থনীতি বাঁচবে না; তাই আমাদের রাজধানী শহরের পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ নজর দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement