২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
যমুনার ভাঙনে লোকালয় বিলীন

শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলে হবে না

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিদ্যালয়, বাড়ি ও জমি। বেড়া, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার গ্রামগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। নিঃস্ব শতাধিক পরিবার। পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিলীন হয়ে গেছে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। ভাঙনের কবলে আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিদ্যুতের সাব-স্টেশন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের খবর নেয়া হয়নি। অনেক সচ্ছল পরিবারও নিঃস্ব। অনেকে সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘরে গাদাগাদি করে দিন যাপন করছে। নেই বিশুদ্ধ পানি কিংবা খাবার।
২৬ মে, বেড়া, শাহজাদপুর ও চৌহালীর বেলকুচির গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, মানুষজন ঘর সরিয়ে নিতে ব্যস্ত। ভিটা হারিয়ে আহাজারি করছে। অনেকে ভেঙে পড়ার আগ মুহূর্তে গাছগুলো কেটে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। ভিটা থেকে প্রায় ৩০ ফুট নিচু নদীর পাড় খাড়া। স্রোতের টানে বিশাল এলাকাজুড়ে বড় ফাটল। কোনো কোনো ফাটল ধসে পড়ছে নদীতে। ভাঙনের তাণ্ডবে গ্রামগুলোতে আতঙ্ক। বেড়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মেসবাউল হক জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে এ উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা, নতুন ভারেঙ্গা ও হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম ভাঙনের কবলে। আকস্মিক ভাঙনে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নদীপাড়ের মানুষগুলো দিশেহারা।
হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চরনাগদা গ্রামের কয়েক ব্যক্তি জানান, অসময়ে নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় আকস্মিক ভাঙন। তীব্র ভাঙনে বাড়িঘর, গাছপালা ও জমি বিলীন হতে শুরু করেছে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জানান, চরনাগদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয়, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, চরসাড়াশিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরপাইখন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পল্লী বিদ্যুতের টাওয়ার ভাঙনের মুখে। বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, বিদ্যুতের কর্মকর্তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। আমরাও বিষয়টি কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
সংসদ সদস্য ফিরোজ কবীর বলেন, ভাঙনের কবলে বাসিন্দারাসহ পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশনটিও হুমকির মুখে। চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। বেড়া উপজেলার ২৫ কিলোমিটার উজানে চৌহালী উপজেলার বেলকুচিতে যমুনার ভাঙনে দিশেহারা পাড়ের মানুষ। চৌহালীর দু’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু স্থাপনা ভেঙে গেছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগ প্রায় ছয় কিলোমিটার জুড়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, উপজেলার সোদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে ওই ইউনিয়নের তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চরমুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরমিটুয়ানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র ১০ ফুট দূর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা। চরমিটুয়ানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, অসময়ে নদীভাঙনের দৃশ্য আগে দেখিনি। যে সময় নদী শান্ত থাকে, সে সময়েই ভাঙন শুরু। স্কুলের আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়েছি। চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানা যাবে, ক্ষয়ক্ষতি কী রকম। শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ গ্রাম ও আরকান্দি গ্রামে যমুনার ভাঙনে নদীপাড়ের অনেক মানুষই বাড়ি ও জমি হারিয়েছে। কেউ কেউ অন্যত্র চলে গেছে, কেউ যাচ্ছে। কেউ কেউ খাস জায়গায়, বাঁধের ঢালুতে আশ্রয় নিয়েছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঘরের চালা, কাঁথা-বালিশ, আসবাবপত্র, গাছপালা। স্থানীয় শরিফুল ও আজাদ জানান, ব্রাহ্মণ গ্রামের এবং আরকান্দি গ্রামের ৮০ শতাংশ ঘরবাড়ি ও জমি নদীতে চলে গেছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা জানান, কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না। আমাদের ভিটা ও জমি অবশিষ্ট নেই। আমরা অসহায় ছিন্নমূল হয়ে যাচ্ছি বুঝি। ভাঙনে মানুষেরা পরিবার পরিজন নিয়ে কে কোথায় চলে গেছে, কেউ জানে না। অব্যাহত ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে ব্রাহ্মণ গ্রাম ও আরকান্দি গ্রাম। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, নদীভাঙনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই-বাছাই করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কর্তৃপক্ষ ভাঙনরোধে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুধু চেয়ে দেখলে হবে না। এ বিষয়ে প্রশাসনের দায়ই প্রধান।


আরো সংবাদ



premium cement