২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
অসহ্য গরমেও লোডশেডিং

জনজীবন বিপর্যস্ত

-

বর্তমান সময়ে সভ্যতার ভিত্তি হচ্ছে জ্বালানি। এর মধ্যে বিদ্যুৎ অন্যতম। আমাদের দেশে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় এসে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতিতে মনোযোগ দেয়। এ জন্য বিতর্কিত কুইক রেন্টালের মাধ্যমে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে জোর দেয়া হয়। যদিও অনেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সরকার বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়নে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, এর ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থের তছরুপ হচ্ছে। সপক্ষে তাদের যুক্তিÑ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ যথেচ্ছ ব্যবহারের জন্য যাতে কোনো ধরনের জবাবদিহি করতে না হয়, তার জন্য দায়মুক্তি নিয়েছে।
সরকারের দাবি, গত প্রায় ১৪ বছরে দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করা হয়েছে। বিদ্যুতের প্রভূত উন্নয়নের কৃতিত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে জাতীয় সংসদের এক অধিবেশনেও সরকারদলীয় এক সংসদ সদস্য বলেছিলেন, এই সরকারের আমলে বিদ্যুতের যে উন্নতি হয়েছে, তাতে বলা যায় ফেরি করে বিদ্যুৎ বিক্রির অবস্থায় দেশ পৌঁছে গেছে।
কিন্তু চলতি জুনে দেশের জনগণ দেখছে, তীব্র গরমের মধ্যেও সারা দেশে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং করতে হচ্ছে সরকারকে। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য, গত শুক্রবার দুপুরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয় ১১ হাজার ৯৬০ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করা হয় এক হাজার ৪৭১ মেগাওয়াট।
গত শুক্রবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দেয়া এ লোডশেডিংয়ের হিসাব আর বাস্তব অবস্থা আকাশ-পাতাল তফাৎ। খোদ রাজধানী ঢাকায় দিনে-রাতে ছয় থেকে এলাকাভেদে আটবার লোডশেডিং করা হচ্ছে। দেশের বড় বড় নগরীসহ প্রতিটি জেলা শহরের অবস্থা আরো খারাপ। আর গ্রামের কোনো কোনো এলাকায় দীর্ঘ সময় লোডশেডিংয়ের পর কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ আসে। এরপর আর বিদ্যুতের খবর থাকে না।
রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা বলে গত কয়েক বছরে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু এখন বিদ্যুতের এ কী হাল। দিনে রাতে ছয় থেকে আটবার বিদ্যুতের লোডশেডিং জীবন যায় যায় অবস্থা। রাজধানীসহ বড় বড় শহরে এখন টেকা দায় হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন অচল হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। একে গ্রীষ্মের তীব্র গরম, এরও ওপর লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাস্তবে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা আসলে ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া আর কিছু নয়। সরকারের দাবি মূলত বাস্তবতা-বিবর্জিত।
লোডশেডিংয়ের এ ভয়াবহ অবস্থার কারণ সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক জ্বালানির নিশ্চয়তা না করে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এখন ডলার সঙ্কটে জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। এ জন্য একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হচ্ছে।
আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের অবস্থা কতটা বিপর্যয়কর তা বোঝা যায়, শুধু কয়লা সঙ্কটে দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে। ১৩২০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ ইউনিটটি গত ২৫ মে বন্ধ করা হয়েছে। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বাকি আরেকটি ইউনিট আজকালের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ দিকে রামপালের একটি ইউনিট চলছে। সেটি থেকেও ৩০০-৪০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে উৎপাদন হতো ৬০০ মেগাওয়াটের উপরে। আরো কয়েকটি তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।
আমরা মনে করি, অপরিকল্পিত কোনো উন্নয়নই শেষ বিচারে জনসাধারণের কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। দূরদর্শী সিদ্ধান্ত না হলে তা সাময়িক সুবিধা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে বিপর্যয়ই ডেকে আনে। বিদ্যুতের বেলায়ও তাই হয়েছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। তাই এ কথা বলা যায়, দেশের বিদ্যুৎ খাত টেকসই করতে হলে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হাতে নিতে হবে। আর তা সরকারি উদ্যোগেই হতে হবে। বেসরকারিভাবে নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement