২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাজেটে সরকারের পছন্দের অগ্রাধিকার

আর্থিক সঙ্কট উত্তরণের কৌশল নেই

-


জাতীয় বাজেট সরকারের একটি নিয়মিত কাজ। প্রতি অর্থবছরের শুরুতে আয়োজন করে জাতীয় সংসদে এটি পেশ করা হয়। বাজারে গিয়ে যখন দেখা যাবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম একবারে অনেক বেড়ে গেছে, মানুষ তখন বুঝতে পারে নতুন বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। নাগরিক জীবনে এর প্রভাব কী; এ নিয়ে আরো রসালো আলাপ আছে। দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা দুরবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। মুদ্রাপাচার, সিন্ডিকেট বাণিজ্যসহ সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি এখন নাজুক অবস্থায়। এর মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এবার তাই নতুন বাজেট নিয়ে রসিকতার সুযোগ নাগরিকদের নেই। তারা উদ্বিগ্ন আসন্ন দিনগুলোতে সংসার কিভাবে চলবে তাই নিয়ে। বাজেট নিয়ে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে সহজে অনুমেয়- বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব আরো তীব্র হবে।

সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি, আয় পাঁচ লাখ কোটি ও ঘাটতি দেখানো হয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বর্তমান সরকারের আমলে অঙ্কের ভেলকিবাজি লক্ষণীয় একটি বিষয়। এ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে। তার আগের অর্থবছরের বাজেট ছিল ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। সেই তুলনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার সাড়ে সাতগুণের বেশি। এ সময়ে আমাদের জাতীয় উৎপাদন, ব্যয় ও মাথাপিছু আয় কি একই হারে বেড়েছে? নিঃসন্দেহে বলা যাবে- ‘না’। মানুষের অর্থনৈতিক প্রবৃৃদ্ধি বাজেটের অঙ্কের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়েনি। আগের সরকারের সময়ে বাজেট এক লাখ কোটি টাকার কম ছিল বলে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা টিপ্পনী কাটে। অথচ বাজেটের আকার আট-দশগুণ বৃদ্ধির প্রতিফলন মানুষের যাপিত জীবনে অনুপস্থিত; বরং ওই সময়ের তুলনায় মুদ্রার মান অনেক কমেছে। সংসার চালাতে সাধারণ মানুষকে দুর্বিষহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের মানুষের মূল সঙ্কট এখন পণ্যের অগ্নিমূল্য ও মূল্যস্ফীতি। এ বাজেটে মূল্য সংযোজন কর এবং শুল্কের পরিমাণ ও আওতা বাড়ানো হয়েছে। বিপুল ব্যয় মেটাতে গণহারে করারোপ মূলত মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের পকেট কেটে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার নামান্তর। ৩৮ ধরনের সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। এবার যারা রিটার্ন দাখিল করবেন তাদের ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দেয়া বাধ্যতামূলক। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যয় হবে প্রধানত অনুৎপাদনশীল কাজে। এ দিয়ে দফায় দফায় বাড়ানো সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে। সাধারণ মানুষের দেয়া করের ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যয় হবে এ খাতে।

এ সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা খাতে বিপুল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের পেছনে অন্য সব বিভাগের সরকারি কর্মচারীদের চেয়ে বেশি ব্যয় করছে এই সরকার। গত অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি, এবার বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার ৬৯৬ কোটি ৭৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আমলে জনগণের স্বার্থের চেয়ে সরকারের পছন্দের মূল্য যে বেশি; এ খাতের বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোয় তা বুঝতে কষ্ট হয় না। অথচ বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। প্রায় সব ধরনের অপরাধ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। পুলিশের বিভিন্ন রিপোর্টে এর প্রমাণ মেলে।
আর্থিক অব্যবস্থাপনায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। মজুদদারি সিন্ডিকেট দেশের ভেতরে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। মাসের পর মাস মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব নিয়ে কার্যকর কোনো কৌশল নেই বাজেটে। এবার সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। নিজেদের সফলতা বড় করে দেখানোর এটি একটি চেষ্টা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধির বাস্তবতা নেই।
বরাবরের মতো সরকার নিজেদের সফলতা তুলে ধরে বাজেট প্রণয়ন করেছে। কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি দেখানো হয়েছে; কিন্তু টাকার অঙ্কে বরাদ্দ সেভাবে বাড়েনি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি। নেই সেভাবে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সঙ্কট প্রশমনের প্রচেষ্টা। সামনের দিনগুলোতে দেশের সাধারণ মানুষের জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর হবে, সেই আশঙ্কাই তীব্র হচ্ছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল