১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
লিফট কিনতে সহ-উপাচার্যের বিদেশ সফর

মন্দার মধ্যে এমন অপচয় বন্ধ হোক

-

গণতন্ত্রের বিনাশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ বহু রকমের অন্যায়-অনিয়মে বিগত এক যুগে বাংলাদেশ বিশ্বে এক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সম্ভবত আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র হয়ে সর্বাধিক মুদ্রা পাচার করি। দরিদ্রতম হওয়ার পাশাপাশি একইভাবে ধনীদের সংখ্যা এ দেশে বেশি। সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করে এমন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টি আমরা আকর্ষণ করতে পেরেছি। দেখা গেছে, বিগত দিনগুলোতে এ দেশে অতি ধনী পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতহারে বেড়েছে। একই সময় দারিদ্র্যসীমার নিচে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। এর মূলে ছিল রাষ্ট্র্রের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে অনিয়মের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন কিংবা আনুকূল্য প্রদান। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা দেশ পরিচালনার জন্য বেছে নিয়েছে অনৈতিকতাকে। এতে করে প্লাবনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে অন্যায় অনিয়ম। তারই সুযোগ নিচ্ছে একটি শ্রেণী।
সবচেয়ে ভড়কে দেয়ার মতো ঘটনা আমরা ঘটিয়েছি দুর্নীতিতে। পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি পর্দা, চামচ, চেয়ার কেনার নামে কিভাবে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করতে হয়। তবে বিদেশ ভ্রমণের যে উছিলা আমরা বানিয়েছি যা মূর্ছা যাওয়ার মতো। এই অলীক সফরনামা তৈরি করেছে সরকারি আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। বন্ধুবান্ধব সুহৃদ ও পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে একটি বিদেশ ভ্রমণের প্রকল্প দাঁড় করাতে হয় তাতে আমরা একেবারে পাকা। সরকারি কোষাগারের অর্থ দিয়ে তারা এমন সফরের আয়োজন করছেন। সর্বশেষ এ ধরনের একটি বিদেশ ভ্রমণের ছক কেটেছেন পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এস এম মোস্তফা কামাল খানসহ ছয় জন।
সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, তারা তুরস্ক যাচ্ছেন লিফট কিনতে। এজন্য তারা সেখানে অবস্থান করবেন ১০ দিন। কামাল খানের সাথে ক্রয় কমিটির এই সফরে রয়েছেন কোষাধ্যক্ষ কে এম সালেহ উদ্দিন, সদস্য সচিব প্রকল্প পরিচালক জি এম আজিজুর রহমান, অপর তিন জন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী। ক্যাম্পাসে আবাসিক হলসহ পাঁচটি ভবন নির্মাণ চলছে। এগুলোর জন্য ২৫টি লিফট প্রয়োজন। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের বাজারে লিফটের অভাব নেই। লিফট সরবরাহ করে এমন বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যথেষ্ট। এ কাজে তাদের সুনাম রয়েছে। এর পরেও কেউ যদি বিদেশ থেকে লিফট কিনতে চান সে জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ইন্টারনেট সুবিধার কারণে দেশে বসেই পণ্যের মান যাচাই করা যায়। তাই এটিকে ভ্রমণবিলাস বলছেন অনেকে। এই দলের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে- ঠিকাদারের খরচে ভ্রমণ করানো হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অর্থে এ ধরনের ভ্রমণ সঠিক হবে কিনা। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, ঠিকাদাররা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সুযোগ সুবিধা এমনকি ঘুষ দিয়ে সরকারি কাজে ফাঁকি দেন। মানসম্পন্ন কাজ তারা করেন না। পরে দেখা যায়, নির্মিত অবকাঠামো ব্যবহার করার আগেই ভেঙে পড়ে। নির্মাণকাজের সাথে জড়িত কর্তৃপক্ষের লোকদের ভ্রমণের সুবিধা দিয়ে ঠিকাদার যদি কাজে ফাঁকি দেন তার দায়ভার কে নেবে? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচর্য ও কোষাধ্যক্ষ যারা সম্মানিত শিক্ষক তারা এ ধরনের সুযোগ নিতে পারেন কি না। তবে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম দুর্নীতির মচ্ছব লেগেছে। তাতে শিক্ষকদের একটি অংশ জড়িয়ে পড়েছে। এতে করে আমাদের শিক্ষার মানও পড়ে গেছে। আমাদের শিক্ষিত সমাজে তাই দেখা দিয়েছে নীতির খরা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি কোষাগারের অর্থে নানা ছুতায় বিদেশ ভ্রমণের এক হিড়িক পড়েছে। একেবারে উদ্ভট কাজেও সরকারি কর্মকর্তাদের বড় বড় সফর বাগিয়ে নিতে দেখা গেছে। খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশন করা শিখতে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের আওতায় বিদেশ ভ্রমণ, পুকুর ও খাল উন্নয়ন শিখতে বিদেশ সফরের খবর দেখা গেছে। যেনতেনভাবে যারা সরকারি অর্থের অপচয় করার উদ্যোগ নেয় তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। ফলে বর্তমান কঠিন অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যেও অনেকে নানা ছুতায় বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ করে নিচ্ছে। আমরা মনে করি, এমন কাজ অপরাধ। যারা এমনটি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণসাপেক্ষে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement