২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
লাম্পি স্কিন রোগের প্রকোপ

গবাদিপশুকে বাঁচাতে হবে

-

একটি সহযোগী দৈনিকের গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গবাদিপশুর মাঝে মহামারী। বাড়ছে আক্রান্ত পশুর সংখ্যা; মরছে গবাদিপশু। প্রাণিসম্পদ বিভাগ মেডিক্যাল টিম করেও এর ব্যাপকতা কমাতে পারছে না। প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে ১০০ থেকে ১৫০টি গরু-বাছুর।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা: মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, এটি ভাইরাস ডিজিজ। সবখানেই মহামারীর আকার ধারণ করেছে। ভ্যাকসিন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকারি ভ্যাকসিনেরও সঙ্কট। বেসরকারিভাবেও ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। ২৫-২৬ হাজারের চাহিদা দিয়েছিলাম। পেয়েছি মাত্র পাঁচ হাজার ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিনের ঘাটতি রোগটি প্রতিরোধে বড় বাধা। আক্রান্ত স্থানের সিম্পটম, আক্রান্ত পশুর রক্ত ও চামড়াসহ স্যাম্পল সংগ্রহ করেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের ডেপুটি চিফ ইফইউফ্যামলজিস্ট ও পাবলিক হেলথের উপ-পরিচালক ।
উপজেলায় গরু ৪০ হাজার ৩৭০ এবং ছাগল ৩৫ হাজার। এর মধ্যে গরু চার হাজার ৭৬১টি এবং ছাগল ১১ হাজার ২৩১টি। ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ এ প্রতিদিনই গরু আক্রান্ত হচ্ছে। শরীরে ফোসকা পড়ছে, গরুর পা ফুলে যাচ্ছে, গলাতে ঘা হচ্ছে, কিছু গরুর চামড়ায় পচনও ধরছে।
বোকাইনগর ইউনিয়নের মনোহর জানান, তিন-চার দিন ধরে গরুর ফোসকা ফোসকা গুটি হয়েছে। গুটিগুলো স্পর্শ করলে খুব শক্ত লাগে। গরু খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। গ্রামে প্রতিদিনই আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়ছে। সহনটা ইউনিয়নের নূর ইসলাম জানান, চিকিৎসা করার পরও গরু ভালো হয়নি। শরীরে ঘায়ের মতো হয়ে গেছে। অচিন্ত্যপুর ইউনিয়নের খান্দার গ্রামের সেকান্দর আলী জানান, তার বাছুর ও গাভীতেও এ রোগ ছড়িয়ে গেছে। আশপাশে ৫০টি গরু আক্রান্ত। আমরা চিকিৎসা নিয়েও চিন্তিত। শাহগঞ্জ গ্রামের ইদ্রিছ আলী জানান, গ্রামের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ গরু এ ভাইরাসে আক্রান্ত। কোরবানির পশু নিয়েও কৃষকরা চিন্তিত। অনেক গরু আশঙ্কাজনক।
ভেটেরিনারি সার্জন ডা: নাজনীন সুলতানা বলেন, এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। মশা ও মাছি এ ভাইরাসের প্রধান বাহক। অর্থাৎ কীটপতঙ্গের মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। আক্রান্ত গরুর লালা খাবারের ও খামার পরিচর্যাকারী ব্যক্তির কাপড়ের মাধ্যমে অন্য গরুতে ছড়ায়। আক্রান্ত গাভীর দুধেও এ ভাইরাস বিদ্যমান। তাই দুধ খেয়ে বাছুরও আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত পশুকে দূরে রাখার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গরুগুলো যেন আক্রান্ত না হয় তার জন্য নিমপাতা, খাবার সোডা খাওয়াতে বলা হচ্ছে। নিমপাতা বা জীবাণুনাশক দিয়ে গরু নিয়মিত ধৌত করাতে ও রোদের তাপ লাগাতেও বলা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার বলেন, ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ১১টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। কোরবানির পশুকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাকসিন ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। সচেতনতা কার্যক্রমও চলছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আফরোজা আফসানা বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গবাদিপশু আমাদের কৃষি তথা জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ। তাই যেকোনো মূল্যে লাম্পি স্কিনসহ যেকোনো রোগব্যাধির কবল থেকে এদের বাঁচাতে হবে। আর তা করতে হবে অবিলম্বেই।


আরো সংবাদ



premium cement