১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বস্ত্র ও তৈরী পোশাক খাতে সঙ্কট

দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি

-

চতুর্মুখী সঙ্কটে নাজুক অবস্থায় পড়েছে দেশের বস্ত্র ও তৈরী পোশাক খাত। গ্যাস, বিদ্যুতের অভাব ও অযৌক্তিক হারে দাম বাড়ানোর পাশাপাশি যোগ হয়েছে ডলারের অপ্রাপ্যতা। ফলে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণ আমদানি হচ্ছে না। এমনকি মিল-কারখানা চালু রাখার জন্য দরকারি যন্ত্র-সরঞ্জামও আমদানি করা যাচ্ছে না। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিল্প খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার ওপর। মালিকরা মিল চালু রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। বেশ কিছু মিল বন্ধ হয়ে গেছে। ছাঁটাই হয়েছেন অনেক শ্রমিক। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিশ্বের ক্রেতারা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেয়ায় কারখানায় উৎপাদনও কমে গেছে। আগে যেখানে শ্রমিকরা অতিরিক্ত সময় কাজ করে কিছু বাড়তি আয়ের সুযোগ পেতেন এখন বেশির ভাগ কারখানায় সেই সুযোগ আর নেই।
সার্বিক সঙ্কটের কারণে বস্ত্রমিলগুলো উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে। মিলগুলো লোকসান দিচ্ছে। ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে কারখানাগুলো রুগ্ন হচ্ছে। কোনোটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বস্ত্র খাতে রফতানি আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বস্ত্র খাতের শিল্পমালিকদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই খাতে শুধু গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণেই উৎপাদন সক্ষমতা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশে। এর অর্থ হলো- উৎপাদনশীলতা কমে গেছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। এটিকে মহাবিপর্যয় বলা যেতে পারে। কারণ বস্ত্র খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো, যার পুরোটাই ঝুঁকিতে পড়েছে।
মিলমালিকদের সংগঠন বলছে, ভারত, চীন ও পাকিস্তান থেকে আসা সুতা-কাপড়সহ বিভিন্ন ড্রেস-ম্যাটেরিয়াল বিভিন্ন নগরীতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘ দিনে গড়ে ওঠা প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতে বিদ্যমান ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি আজ অস্তিত্বসঙ্কটে। তারা পোশাক শিল্পে কাপড় তৈরির জন্য ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে সংগৃহীত কটন সুতার একাংশ দেশীয় বস্ত্রকল থেকে সংগ্রহের বিধান করার দাবি জানান।
শুধু বড় মিলগুলো নয়, একই রকম সঙ্কটে নিমজ্জিত ছোট ও মাঝারি মানের ফ্যাব্রিক মিলগুলোও। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, পলাশ, কালিবাড়ী, মাধবদীসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক ছোটখাটো মিল রয়েছে। এসব এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা মূলত তাঁতনির্ভর এবং মিলগুলো পরিচালিত হয় সাধারণত বিদ্যুৎ দিয়ে। ফলে বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে মিলগুলোর যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণ করার কোনো বিকল্প নেই।
বস্ত্র খাত বাঁচানোর স্বার্থে রফতানিমুখী তৈরী পোশাক শিল্পে সুতা বিক্রিতে সুরক্ষা দাবি করেছেন মালিকরা। তারা বলেন, পোশাক শিল্পে কাপড় তৈরির জন্য ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে সংগৃহীত কটন সুতার একটি অংশ দেশীয় বস্ত্রকল থেকে সংগ্রহের বিধান করা হোক।
তৈরী পোশাকের ক্ষেত্রেও নেই কোনো সুখবর। করোনা মহামারীর সময় থেকে অর্ডার কমছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় তা চরমে পৌঁছে। কারখানার উৎপাদনও কমে যায়। এতে সঙ্কটে পড়ছেন বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী গার্মেন্ট খাতের শ্রমিকরা। শ্রমিকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
মূল্যস্ফীতির চাপ সবচেয়ে বেশি পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রায়। ভালো বেতনে চাকরি করা মানুষেরই নাভিশ্বাস উঠেছে। সেখানে স্বল্প মজুরির গার্মেন্ট শ্রমিকের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। মাছ-গোশত তো দূরের কথা, ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচাও কঠিন হয়ে গেছে।
এখন একটি ফ্যাক্টরির যে উৎপাদনক্ষমতা তার ৬০-৭০ শতাংশ কাজ হচ্ছে। গত তিন মাস ধরে ওভারটাইম বন্ধ। ভয়াবহভাবে অর্ডার কমে যাচ্ছে। মালিকদের টিকে থাকাই মুশকিল। গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, আমাদের উৎপাদন খরচ যে পরিমাণে বেড়েছে তাতে কারখানা টিকিয়ে রাখাই কঠিন। যে ফ্যাক্টরির আগে গ্যাস বিল আসতো তিন কোটি টাকা, এখন সেই ফ্যাক্টরির গ্যাস বিল আসছে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিলও একইভাবে বেড়েছে।
সব মিলিয়ে একটি অন্ধকার সময় ঘনিয়ে আসছে বস্ত্র ও তৈরী পোশাক খাতে। দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করা অসম্ভব হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement