১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে ডেঙ্গু

ঢাকায় মশা মারা হচ্ছে না এখনো

-

রাজধানী ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে রাজধানীর উপকণ্ঠের নিচু এলাকাগুলোতে মশার উপদ্রব বাড়ছে। অনেক এলাকায় এরই মধ্যে বাসিন্দারা মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। অথচ মশা মারার ব্যাপারে নগর কর্তৃপক্ষ এখনো তেমন কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এখনো প্রস্তুতি পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে মশা থেকে সৃষ্ট ডেঙ্গুর মতো রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে নগরজুড়ে। যদিও ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার প্রজননকাল শুরু হয় জুন থেকে অর্থাৎ বৃষ্টির মৌসুমে। কিন্তু দেশে মে মাসের শুরু থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি মারাও গেছেন ১৩ ব্যক্তি। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরে ২১ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক, যা গত বছরের তুলনায় ছয়গুণ বেশি। আর ২০২১ সালের তুলনায়, প্রায় সাড়ে ১৪ গুণ।
এবার এডিসের প্রজনন মৌসুম শুরুর আগেই আগের বছরগুলোর তুলনায় ছয়গুণ বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া রোগটির বিস্তারের প্রমাণ। গত দুই বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ডেঙ্গুতে কারো মৃত্যু হয়নি। এবার বছরের প্রথম চার মাসে মারা গেছেন ১৩ জন। এ পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে আশঙ্কাজনক। প্রজনন মৌসুম শুরু হলে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই ভাবনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে বিশেষজ্ঞসহ দেশবাসীর। তারা বলছেন, হঠাৎ অস্বাভাবিক পরিবর্তন এসেছে ডেঙ্গুর গতিপ্রকৃতিতে। সব রেকর্ড ভেঙে এবার নিরাপদ সময়েও ভয়াবহ বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে মশাবাহিত এ রোগের। গত ১৯ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত পাঁচ দিনে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২০৬ জন। ডেঙ্গুর এ প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা বছরব্যাপী ডেঙ্গু বিস্তারের ইঙ্গিত বলে মনে করেন এ রোগ নিয়ে গবেষণা করা বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণত ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এটি এডিস মশার প্রজননকাল। তখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় দেশজুড়ে। ডেঙ্গু এখন কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক রোগ নয়। সারা দেশে এটি দেখা দিচ্ছে। তবে এডিস মশার প্রজননের মৌসুম শুরুর আগে রোগাক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এখন এমন অনেক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে বৃষ্টি ছাড়াই পানি জমে থাকে। যেমন বহুতল ভবনের পার্কিং, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বক্স ও বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি। বাসাবাড়ি, দোকানপাট বা বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়া পানি রাস্তাঘাটে জমে থাকে। পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এখন বছরজুড়ে যেখানে সেখানে পানি জমে থাকছে। ফলে এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে। আর চলতি মাসে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এডিসের প্রজননক্ষেত্র আরো বেড়েছে। সে জন্য রোগ ছড়াচ্ছে।
জানা যায়, ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা বলতে প্রধানত যেটি ধরা হয় সেটি হলো- মশা মারা। কিন্তু সিটি করপোরেশন সে কার্যক্রম এখনো শুরু করতে পারেনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কেবল এ কার্যক্রমে অংশ নেয়া সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে আর সরকারের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছে। এদের নেতৃত্বে মশকনিধন অভিযান চালানো হয়। ঢাকা উত্তর সিটি মশা মারতে এবার একটি নতুন ওষুধ ব্যবহার করা হবে কি না সে নিয়ে বিচার-বিবেচনা করছে।
এমন অবস্থায় এবার ডেঙ্গু বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু রোধে প্রথমত ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিধনের ওপরই গুরুত্ব দেন। তারা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করা দরকার বলে মনে করেন। কিন্তু আমাদের নগর কর্তাদের সে কথায় কান দেয়ার সময় সম্ভবত খুব একটা নেই।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement