২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি

ভোটাধিকার রক্ষায় কাজে আসবে

-


ভোটের অধিকার হারিয়ে বাংলাদেশের মানুষ গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। শুধু নিজেদের প্রার্থীদের জনপ্রতিনিধি বানাতে ত্রাস ছড়াতে যত কৌশল আছে সরকারি দল সবই করেছে। জালিয়াতি কারচুপির কোনো কূটকৌশল বাদ রাখেননি। এই অপকর্মের সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশন রাবার স্ট্যাম্পের ভূমিকা পালন করেছে। এদিকে আন্দোলন করে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবে তার সুযোগও বিরোধীরা পাননি। সব রাজনৈতিক আন্দোলন দমানো হয়েছে নিষ্ঠুরভাবে। এ নাজুক অবস্থায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র্র দফতর এক ঘোষণায় জানিয়েছে- সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে বাধাদানকারীদের ভিসা দেবে না ওয়াশিংটন।

বাংলাদেশে গুম, খুন ও মানুষের জীবনের নিরাপত্তা শঙ্কা যখন চরমে তখনো দেশটির আরেকটি নিষেধাজ্ঞা তা লাগাম টেনে ধরতে সহায়তা করেছে। এ ভিসানীতিতে যে পদক্ষেপ নেয়ার আগাম ঘোষণা দেয়া হয়েছে; আশা করা যায় সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ এবং ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা ভোট নিয়ে অনিয়ম থেকে বিরত থাকবেন। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরদিন অনুষ্ঠিত গাজীপুর নির্বাচনে তার কিছুটা লক্ষণ দেখা গেছে। সরকারি দলের বিপক্ষে দাঁড়ানো প্রার্থী সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। এ ধরনের নির্বাচনগুলোতে আগে দেখা গিয়েছিল ভোটের ফল কারসাজি করতে। যদিও এ নির্বাচনে মানুষের অংশগ্রহণ ছিল কম ও তা উৎসবমুখর ছিল না।

মার্কিন ভিসানীতিতে যেসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশীদের ভিসা দেবে না বলে ঘোষণা করেছে সেগুলো হচ্ছে- ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারচর্চাকে সহিংসতার মাধ্যমে এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকে মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড। স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে, দেশটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিকব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে এই ভিসানীতি সাজিয়েছে। ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্র মুখথুবড়ে পড়ে। ২০১৮ সালে নিশি রাতের নির্বাচনে অরাজকতা আরো বেড়ে যায়। এর মূল কারণ ছিল দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া। মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতির আওতায় আসছেন। এর ব্যাপকতা আঁচ করা যায় যখন কোনো ধরনের অন্যায় কর্মের নির্দেশদাতাকে এর আওতাভুক্ত করা হয় এবং বিচার বিভাগও এর বাইরে থাকেনি। কর্তব্যক্তিদের দায়মুক্তি পাওয়া গণতান্ত্রিকব্যবস্থা ধসে পড়ার অন্যতম কারণ। এ সময়ে দেখা গেছে, সরকারের যত বড় দায়িত্বশীল তার ক্ষমতার দাপটও তত বেশি। তিনি কোনো অপরাধ করলে সেটি ধর্তব্যে আসে না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সাধারণ মানুষ বড় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিকার পাননি।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের একটি বিশেষ ধারা ২১২ এর (এ) (৩) অনুযায়ী এ নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধারার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেকোনো সময় যেকোনো ব্যক্তিকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। এ জন্য আলাদা করে কোনো ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজন হবে না। নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর এর তীব্র বিরোধিতা কিংবা সমালোচনা করতে দেখা যায়নি সরকারের তরফ থেকে। যেটি সরকারের এতদিনকার আচরণের সাথে মিলে না। কর্তাব্যক্তিদের পক্ষ থেকে বরং একে এক ধরনের সমর্থন দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এর যথেচ্ছ প্রয়োগ যেন না হয়। বিরোধীদের সুযোগ দেয়ার ব্যাপারে বর্তমান সরকার অব্যাহতভাবে অনমনীয় অবস্থান প্রকাশ করে। আশা করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই ব্যবস্থা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবে।


যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমরা সিদ্ধান্তটি সবচেয়ে গঠনমূলক এবং ইতিবাচক উপায়ে নিয়েছি। আমরা চাই এটি বাংলাদেশে সংলাপ এবং আগামী বছরে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকার, বিরোধী দল ও সুশীলসমাজ সবার প্রচেষ্টায় অবদান রাখবে’। এতে করে বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার হয়েছে, আমেরিকা চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র সঠিক ধারায় ফিরে আসুক। যেকোনো নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ কোনো দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনে না। ক্ষমতাসীনরা নিজে থেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গণতন্ত্র উত্তরণের পথে হাঁটলে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রয়োজন হতো না।

 


আরো সংবাদ



premium cement