১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
লাগামহীন মসলার বাজার

সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে

-

বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের রান্নায় অপরিহার্য অনুষঙ্গ মসলা। কিন্তু সেই জিনিসের বাজার এখন আকাশছোঁয়া। লাগামহীনভাবে বাড়ছে মসলার দাম। অবশ্য প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম এখন সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এটি সরকারের বাজার-ব্যবস্থাপনায় নজরদারিতে ব্যর্থতার নজির। মূলত দীর্ঘ দিন ধরে সরকারের প্রায় সব নীতি ব্যবসায়ীবান্ধব হওয়ায় ভোক্তারা বেকায়দায় পড়েছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশ, রাজধানীর বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৮৬০ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৭০০-৮০০ টাকা। গত বছরের এ সময়ে জিরার কেজি ছিল ৪০০-৪৫০ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে লবঙ্গের কেজি ছিল ১৪০০-১৫০০ টাকা। কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৬০০ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৪০০ টাকা। গত বছরের এ সময়ে বিক্রি হয় ১১০০-১২০০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে গত সপ্তাহে ৪৫০-৫২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দারুচিনির দাম বেড়ে এখন হয়েছে ৪৯০-৫২০ টাকা। অর্থাৎ সাত দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এক বছর আগে দাম ছিল ৪০০-৫০০ টাকা। কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেড়ে ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকায়। সাত-আট দিন আগেও দাম ছিল প্রতি কেজি ১৫০-২০০ টাকা। এক বছর আগে পণ্যটি কেনা যেত ১২০-১৭০ টাকায়। এ দিকে আদার কেজি এখন ৫০০ টাকা। এক মাস আগে বাজারে যে চীনা আদার কেজি ছিল ২২০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। চীনা আদা বাদেও ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা আদার দামও বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকা। পেঁয়াজের দাম এখন ৭৫-৯০ টাকা, যা ১০ দিন আগেও ছিল ৬০ টাকা। কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা। আর দেশী আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি।
সাধারণত, রোজার ঈদের পর থেকে পাইকারি বাজারে বাড়তে শুরু করে মসলার দাম। প্রায় প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে দাম বাড়ে। তবে এবার আরো আগে থেকে বাড়তে শুরু করেছে। সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতায় সব মসলার দাম হু হু করে বাড়ছে। অথচ বাজারে মসলা ও মসলাজাতীয় পণ্যের কোনো সঙ্কট নেই। এর পরও দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে অজুহাতের যেন শেষ নেই। রফতানিকারক দেশগুলোর মসলা উৎপাদন কম হওয়ার অজুহাত যেমন দেয়া হচ্ছে, সাথে যুক্ত হয়েছে ডলার সঙ্কটে এলসি বা ঋণপত্র খোলার জটিলতা।

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এবার মসলা আমদানি হয়েছে দ্বিগুণ। তবু ঈদের আগে এখনই লাগামহীনভাবে বাড়ছে এর দাম। ইতোমধ্যে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, গোলমরিচ এবং রসুন-পেঁয়াজের মতো মসলার দাম বাড়ানো হয়েছে কেজিতে ৩০-১০০ টাকা পর্যন্ত। এর প্রমাণ মেলে দেশে প্রতিদিন আমদানি করা মসলার পরিমাণ দেখলে।
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি মে মাসের প্রথম ২০ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৪১৪ দশমিক ৩৭ টন জিরা আমদানি হয়েছে যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৮০ দশমিক ৯৫ টন। কিন্তু সঙ্কট দেখিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জিরার দাম বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের তথ্য অনুযায়ী, কোরবানি সামনে রেখে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২০ মে পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৪৩৮ টন দারুচিনি, ৪২৩ টন লবঙ্গ, ৮৫৮ টন এলাচ, এক হাজার ২৫৩ টন জিরা, ১০৬ টন জয়ত্রী এবং ৪৯৩ টন গোলমরিচ আমদানি হয়েছে। আর স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ট্রাকে করে আসছে মসলা। সব মিলিয়ে লবঙ্গ ৩০ শতাংশ, মরিচ ১১ শতাংশ ও রসুনের আমদানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
আমরা মনে করি, দেশের মসলার বাজার গুটিকয়েক আমদানিকারক নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তারাই মূলত সিন্ডিকেট করে মসলার দাম বাড়াচ্ছেন। এদের শনাক্ত করে এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তা না হলে মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল