১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প বিপন্ন

একে ধরে রাখতে হবে

-

সহযোগী একটি দৈনিকের নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্যের কদর নেই বললেই চলে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে স্থানীয় শিল্পটি। গ্রামীণ মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে, অফিস-আদালতসহ সবখানেই ব্যবহার করত বাঁশ ও বেতের সরঞ্জাম। বদলে গেছে সব কিছু।

পিরোজপুরের নাজিরপুরের ঐতিহ্যবাহী ছিল বাঁশ ও বেত। মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস ছিল এ শিল্প। আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে শিল্পটি। চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই দিনমজুর ও কারিগররা। এ পেশাকে ধরে রেখে জীবিকা নির্বাহ করছে মাত্র কিছু পরিবার।
উপজেলার দেউলবাড়ি, মালিখালি, শেখমাটিয়া ইউনিয়নের ২৫-৩০টি পরিবার লোকশিল্পটি ধরে রেখেছে। পরিবারগুলোর পুরুষদের পাশাপাশি সংসারের কাজ শেষ করে নারীরাও বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরি করছেন। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে অনেক পরিবারই অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছে। বাজারে সহজলভ্য ও আকর্ষণীয় প্লাস্টিক পণ্য এবং অন্যান্য দ্রব্যের মূল্যের সাথে পাল্লা দিতে না পারায় কারিগররা পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন। সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। পেশাকে টিকিয়ে রাখতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জিনিসপত্রের মূল্য যেভাবে বাড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না পণ্যের মূল্য, যার কারণে কারিগররা হিমশিম খাচ্ছেন।
শেখমাটিয়া ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের কারিগর সুদেব ঘোষাল জানান, বাপ-দাদার পেশাকে ধরে বেঁচে আছি। যেটুকু আয় হয়, তা দিয়েই পরিবার চালাই। ২০ থেকে ৩০ টাকা দিয়ে বাঁশ কেনা যেত, এখন সে বাঁশ কিনতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। বাড়েনি পণ্যের দাম। বাড়ি নির্মাণে যে পরিমাণ বাঁশের প্রয়োজন, সে পরিমাণ বাঁশের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে না। টাকা-পয়সা কম, বেশি বাঁশ কিনতে পারি না। ছোট থাকার ঘর ছাড়া কিছুই নেই। সরকারিভাবে যদি এই কাজের জন্য সহযোগিতা পেতাম, তাহলে কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পারতাম এবং শিল্পটাকে ধরে রাখতাম। ছেলেমেয়েকে ভালো লেখাপড়া করাতে পারতাম।

মালিখালি ইউনিয়নের শিংখালি ও পাকুরিয়ার কারিগর স্বপ্না বারুই, শীলা, হরপ্রসাদ, বিজন দাসসহ অনেকে বলেন, আমরা কয়েকটি পরিবার এ কাজে আছি। একটি বাঁশ থেকে ১০-১২টি ডালি হয়। প্রতিটি পণ্য থেকে ১৫-২০ টাকা লাভ থাকে। আগের মতো লাভ হয় না। সীমিত অর্থ দিয়ে পরিবার চালানো কষ্টের বিষয়। হাটে ও গ্রামে পণ্য বিক্রি করে থাকি। যদি আমরা সহযোগিতা পাই, তাহলে এ শিল্পকে বাঁচাতে পারব।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, প্রান্তিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁশশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল। এটি পিরোজপুরে চালু হওয়ার কথা। এটি চালু হয়নি। আমরা কিছু মানুষকে অনলাইনে আবেদনও করিয়েছি এবং এটি প্রক্রিয়াধীন। যখন চালু হবে, তখন অনুদান ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
এ দিকে প্রশাসন শিগগিরই পর্যাপ্ত নজর দেবে বলে আমরা মনে করি। কারণ
তা না হলে আমাদের একটি মূল্যবান ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement