কর্তৃপক্ষের সাড়া মিলবে কখন
- ২০ মে ২০২৩, ০০:০০
রাষ্ট্রীয় সেবাদানকারী কিছু প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ ধরনের একটি সংস্থার নাম ঢাকা ওয়াসা। সংস্থাটির দুর্নীতি নিয়ে কয়েক বছর ধরে সংবাদমাধ্যমে খবর আসছে। সুনির্দিষ্ট ওইসব অভিযোগের বিচার দূরে থাক, কোনো তদন্ত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। এমন উদাসীনতা রাষ্ট্রব্যবস্থার অনেক জায়গায় জেঁকে বসেছে। ওয়াসার যার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। এবার খোদ ঢাকা ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। ওয়াসার ভেতরে চলা স্বেচ্ছাচারিতা-অনিয়ম, দুর্নীতির প্রতিকার চেয়েছেন তিনি। পরিস্থিতির কতটা অবনতি হলে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রতিকার চাইতে পারেন। ঢাকা ওয়াসা রাজধানীতে বসবাসকারী প্রায় দুই কোটি মানুষকে পানি সরবরাহ করে থাকে। সেই প্রতিষ্ঠানের ভেতরে প্রধান দুই কর্মকর্তার একজন অপরের সুস্পষ্ট অভিযোগ আনলেন। সরকারের কাছে এসব অজানা থাকার কথা নয়, তার পরও কেন আগাম ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, সত্যিই তা এক বিস্ময়!
তাকসিমের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের নিয়মবিধির তোয়াক্কা না করার অভিযোগ রয়েছে। নিজের সুবিধায় নতুন নতুন নিয়ম চালু করেন তিনি। বিদেশে ছুটিতে থেকেও দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজের বেতন বাড়িয়েছেন কয়েকগুণ, অথচ একই সময় ওয়াসার সেবার মান কমেছে। ঢাকাবাসী বিশুদ্ধ পানিপানের কথা চিন্তাও করতে পারেন না; বরং কোথাও কোথাও পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের সাথে মেশায় এ পানি ফুটিয়ে খাওয়ারও উপযুক্ত থাকে না। অনিয়ম ও দুরবস্থার এই চিত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত, কিন্তু সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এবার চেয়ারম্যান লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। অভিযোগের সারনির্যাস হচ্ছে- তাকসিম প্রতিষ্ঠানটিকে ‘স্বৈরাচারী’ কায়দায় চালাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে ওয়াসা অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এমডি পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে কোনো সহযোগিতা করেন না। বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নেয় তার কোনো তোয়াক্কা করেন না, এমডির স্বেচ্ছাচারিতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে চেয়ারম্যান চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের অর্থ নিজের কাছে রাখেন, ইচ্ছেমতো খরচ করেন। যারা অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে বলতে চেয়েছেন তাদের চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিতে একটি ভীতিকর অবস্থা তৈরি করে জবরদস্তি অবস্থা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এখন একটি অশুভ চক্র গড়ে তোলা হয়েছে। পেশাজীবীদের নিয়ে গড়া ওই চক্রকে অনিয়ম-দুর্নীতির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান দুই কর্মকর্তা এভাবে সরাসরি বিরোধিতায় লিপ্ত হলে সেটি বড় উদ্বেগের কারণ। এর অর্থ হচ্ছে- আমাদের সরকারব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করছে না। এর ভেতরে বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারণ করেছে। অনেকে হয়তো বিচ্ছিন্নভাবে ওয়াসার ভেতরের অনিয়মের প্রতিকারের কথা বলবেন কিন্তু এ অবস্থায় এর ভেতরের বিরোধ ধামাচাপা দেয়া হলেও তার বিকৃতি নানাভাবে প্রকাশিত হবে। এ পরিস্থিতি অন্য সব বড় প্রতিষ্ঠানে এখনো দেখা না গেলেও সেখানেও এমন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। জনস্বার্থে পরিচালিত দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে একই অবস্থা দেখা দিলে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা হারানোয় এর কুফল জাতিকে গ্রাস করেছে। এবার যদি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে ধসে পড়ে, আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার অস্তিত্বে টান পড়বে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়তে শুধু এমডি ও চেয়ারম্যানকে দায়ী করা হলে সেটি সঠিক হবে না। গোড়ায় গলদ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। কেন এ অবস্থার অবতারণা হলো। কেন অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। কোথা থেকে তদন্ত ও বিচারে বাধা দেয়া হচ্ছে, সেটি চিহ্নিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের এভাবে ভেঙে পড়া রোধে শিগগিরই সেখানে সংস্কারে হাত দিতে হবে। অন্যথায় ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে আমাদের।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা