২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে পরিত্রাণ

দুর্যোগ থেকে কী শিক্ষা নেবো?

-

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের বশীভূত হবে এর দূর সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। সমুদ্রসৃষ্ট প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়, ভূ-ভাগের ভূমিকম্প, ভূমিধস ও মহামারীর আঘাত প্রতিরোধে মানুষ চরম অসহায় হয়ে আছে। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রভূত উন্নতি বিশ্বকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। আঙুলের ডগার একটি আলতো চাপ তার কাছে হাজির করে দিচ্ছে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। সেই মানুষকে দেখা গেল সামান্য এক ভাইরাসের কাছে পর্যুদস্ত হতে। করোনা প্রমাণ করে দিয়ে গেছে, প্রাগৈতিহাসিককালের মানুষের মতো বর্তমান মানুষও অজানা বিপদের কাছে একই রকম অসহায়। রোববার দুপুরে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আমাদের অস্থিরতা করোনার অসহায়ত্বের মতো ছিল। ভাগ্য ভালো যে, এটি যেই মাত্রার শক্তি নিয়ে আঘাত হানার কথা সেভাবে উপকূলে আছড়ে পড়েনি। ফলে মানুষের প্রাণহানি ঘটেনি ও সম্পদের ক্ষতি বেশি হয়নি। তবে এতে আমাদের জন্য শিক্ষা নেয়ার ও ভাবনার উপাদান রয়েছে।
মোখা নিয়ে পূর্বাভাস থেকে উপকূলে ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল। বলা হয়েছিল- এর প্রভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ১০-১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এতে করে উপকূলের চর এলাকা গভীর পানিতে তলিয়ে যাবে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন দ্বীপ লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। সেখানে থাকা কয়েক হাজার মানুষ সরিয়ে নেয়ার জন্য হা-হুতাশ করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে সংশ্লিষ্ট উপকূলীয় এলাকায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়। বাস্তবে দেখা গেল, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আঘাত হানা আইলা, সিডরের মতো শক্তি নিয়ে এটি আমাদের উপকূলে আঘাত হানেনি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড়টি শেষ মুহূর্তে গতিপথ পরিবর্তন করেছে। যখন এটি আমাদের উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করে তখন সমুদ্রে ভাটা ছিল। একই সময় ছিল না ভারী বৃষ্টি। ফলে ভয়াবহ ক্ষতি থেকে আমরা বেঁচে গেছি।
সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে জানা যাচ্ছে, কক্সবাজারে দুই হাজার ২২টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার ৪৬৯টি ঘরবাড়ি। বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে গেছে, ঢালপালা ভেঙে পড়েছে। এতে ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। সামুদ্রিক ঝড়ে উপকূলে অস্থায়ীভাবে থাকা রোহিঙ্গা শিবিরে সেই হিসাবে কিছুটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের দুই হাজার ৫৪৮টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আহত হয়েছে সাত রোহিঙ্গা। উপকূলের দুর্যোগকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ কিংবা বিঘিœত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ সচল নয়। প্রাণহানির মতো ঘটনা না ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে মোখার আঘাতের পর বহু পরিবার দুস্থ অবস্থায় পড়বে। যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ফসলহানি ও রক্ষিত ধানচাল নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের জন্য নিয়মিত সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে কর্তৃপক্ষ তাদের অব্যাহত সাহায্য দেয়ার কর্মসূচি নেবে আশা করা যায়।
মোখা আমাদের প্রাণহানির কারণ না হলেও এর আগের সামুদ্রিক ঝড়গুলোর আঘাতে বহু মানুষের প্রাণ গেছে। ওই সব দুর্যোগের সময় হয়তো মোখার মতো সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেয়াও হয়নি। বলা যায়, তখন এমন ভয়াবহ কিছু হবে আঁচও করা হয়নি। তার পরও তেমনটি হয়েছিল। এবার আমরা বেঁচে গেছি এমন একটি মনোভাব দেখা যাচ্ছে আমাদের মধ্যে। বাস্তবতা হচ্ছে- প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা বছর বছর আমাদের জীবনে এক বাস্তবতা। পূর্বাভাস অনুযায়ী আমরা সতর্ক হতে পারি। সতর্কতা কিছু উপকারও হয়তো দিতে পারে। কিন্তু চিরতরে এ থেকে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এই জামানায় ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তিস্থল ও গতিপথ আমরা অগ্রিম জানান দিতে পারি। কিন্তু এগুলো কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কোন ধরনের দুর্যোগ অপেক্ষা করছে; তা জানি না। তবে বিষয়টি আমাদের কাছে প্রমাণিত যে, এর উৎপত্তি ও গতিপথ নিয়ন্ত্রণের ওপর আমাদের কোনো হাত নেই। তাহলে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ বলে যাকে আমরা নাম দেই সেটির স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক কে? দেখা যাচ্ছে, তিনি সবচেয়ে শক্তিশালী। আমাদের উচিত সেই শক্তিশালী নিয়ন্ত্রকের দিকে মনোনিবেশ করা।


আরো সংবাদ



premium cement