২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
চিকিৎসার নামে বাণিজ্য

দোষী ডাক্তারের শাস্তি হোক

-

চিকিৎসার নামে বাণিজ্য বহুদিন ধরে চলছে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। চিকিৎসাসেবার নামে রোগী ও তার স্বজনদের কাছে থেকে গলাকাটা দাম নেয়া তো সাধারণ ঘটনা। রোগী মারা গেলে তার লাশ আটকে রেখে বিপুল চার্জ আদায়ের অমানবিক দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে। একই সাথে ভুল চিকিৎসা, অপচিকিৎসায় রোগী মেরে ফেলার দৃষ্টান্তও ভূরি ভূরি। এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতাল। সেখানে বিনাপ্রয়োজনে হার্টে রিং পরিয়ে ও পরবর্তী চিকিৎসায় অবহেলার কারণে মারা গেছেন জাকির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী। ঘটনাটি গত ১৫ মার্চের।
ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে। রোগীর স্বজনদের সাথে আলোচনা করে চিকিৎসার খরচ ফেরত দিয়েছে এবং ঘটনার দায় স্বীকার করে গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তির লক্ষ্যে লিখিত প্রতিশ্রুতিও দেয়। এ বিষয়ে গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট রোগীকে প্রয়োজন ছাড়াই হার্টে রিং পরানোর কাজটি করেন দু’জন চিকিৎসক। তারা দু’জনই সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের (এনআইসিভিডি) অধ্যাপক। একজন মো: গোলাম আজম, অন্যজন ডা: শেখর কুমার মণ্ডল। রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ডা: শেখর কুমার মণ্ডল বেসরকারি হাসপাতালে কনসালট্যান্ট হিসেবেও কাজ করেন। তিনি রোগী জাকিরের ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাম করিয়ে বলেন, রোগী ঘণ্টা দেড়েকের বেশি বাঁচবে না। এখনই রিং পরাতে হবে।
স্পষ্টত রোগীকে বাধ্য করা হয় রিং পরতে। অথচ জাকিরের হার্ট পরীক্ষার আগের রিপোর্টগুলোতে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। একজন চিকিৎসক তাকে শুধু গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছিলেন।
জাকির ছিলেন ডায়াবেটিসের রোগী। নিয়মিত ইনসুলিন নিতেন। সেটি জেনেও গ্রিন লাইফে রিং পরানোর পর ১২ ঘণ্টা ধরে জাকিরকে ইনসুলিন দেয়া হয়নি। ১৫ মার্চ মারা যান তিনি। এভাবে হাসপাতালগুলো লোভী ও দুর্বৃত্ত চিকিৎসকদের জোগসাজশে মানুষ খুন করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন। জাকিরের মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। জেনেশোনে ভুল চিকিৎসা দেয়া হত্যার পর্যায়ে পড়ে। অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে অভিযোগ দিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। অভিযোগ দিয়েছেন কলাবাগান থানায়ও। কিন্তু থানা থেকে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, উল্টো হাসপাতালের পক্ষ নিয়ে রোগীর স্বজনদের এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে পুলিশ-বলেছেন মৃতের স্ত্রী। অভিযোগ আমলে নিয়ে ওই দুই চিকিৎসককে তলব করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গ্রিন লাইফের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা জানি, বাংলাদেশ এখন এমন একটি দেশ যেখানে অপরাধের বিচার কমই হয়। প্রভাবশালীরা অনেকে ব্যক্তিস্বার্থে অপরাধীকে রক্ষা দেয়ার কাজে যেন ব্যস্ত। রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে বিচারহীনতার এ সংস্কৃতির অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে না।
সুতরাং বিএমডিসি অথবা স্বাস্থ্য অধিদফতর যে-ই অভিযোগ আমলে নিয়ে থাকুক না কেন, এর ফল অনুমান করা কঠিন নয়। এত বড় একটি অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট দুই চিকিৎসককে তাদের দায়িত্ব থেকে বিরত করা উচিত ছিল। পরে অভিযোগ খতিয়ে দেখে চূড়ান্তভাবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। সেসব করা হয়নি।
আমরা মনে করি, প্রথমত এ ধরনের অপরাধে জড়িত দুই চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিল হওয়া জরুরি। এরপর হত্যার দায়ে তাদের বিচার হওয়া উচিত। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হলে কেবল রোগী মারা চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য কমতে পারে। কিন্তু ঘটেছে কী? অভিযোগ আমলে নিয়ে চিকিৎসকদের তদারকি সংস্থা বিএমডিসির রেজিস্ট্রার বলেছেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ‘লোকবল সঙ্কট থাকায় কিছুটা দেরি হয়’। বিচারে বিলম্বের মানে কী সেটি সবার জানা। আমরা আশা করব, ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে যাতে ভবিষ্যতে আর কাউকে এভাবে জীবন দিতে না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement