১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গাড়ি-বাড়ির মালিক গরুচোর

নৈতিক অবক্ষয় সর্বস্তরে

-

গরু চুরি করে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে, এমন একটি খবর ছেপেছে সহযোগী এক দৈনিক। গত এক যুগে ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হরিলুট হয়েছে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ থেকে রেহাই পায়নি। অপরাধের চরিত্র অনুযায়ী, এসব চুরি নয়, রীতিমতো ডাকাতি। এ সময়ে সরকার লাখো কোটি টাকার বাজেটে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প করেছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। সেই তুলনায় গরুচুরি সামান্য একটি অপরাধ। তবে দেশে চুরি সংস্কৃতির বিস্তার ঘটায় আমাদের নৈতিক অবক্ষয় এক অভিন্ন কেন্দ্র থেকে সঞ্চারিত হচ্ছে। সর্বস্তরে এ ঘৃণিত নীতিকে যেন আমরা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছি।
যেভাবে সরকারি কোষাগারের তহবিল থেকে কর্র্তৃপক্ষের অগোচরে হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া হয়েছে, তা চুরি। আবার বাসাবাড়ি থেকে সামান্য ঘটিবাটি নেয়াও চুরির আওতায় পড়ে। ব্যাংক থেকে চার হাজার কোটি টাকা লোপাট হওয়ার পর এই সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এটি ‘বড় অঙ্ক’ নয়।
আমরা অপরাধের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তখনই হারিয়েছি যখন অঙ্ক দিয়ে মাপতে শুরু করি। এখন রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে যখন পুকুর নয় সাগর চুরি চলছে; তখন একই গতি পেয়েছে ছিঁচকে চুরির ঘটনাও। এই গরুচোরকে হয়তো একেবারে ছিঁচকে চোর বলা যাবে না। তবে সে চুরি করার অবাধ সুযোগ পায়, ফলে সরকারি অফিসের চাপরাশি, পিয়ন ও বড় কর্মকর্তার গাড়ির চালকের মতো গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের কালিয়া কান্দাপাড়া হাট থেকে একটি ষাঁড় চুরির সূত্র ধরে ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশ এই গরুচোরকে আটক করেছে। জাকির হোসেন নামে এ চোর ১৫-১৬ জনের একটি চক্র গড়ে তোলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, গরু চুরির টাকায় জাকির দু’টি ট্রাক ও রাজধানীর কদমতলী এবং নারায়ণগঞ্জে দু’টি বাড়ি নির্মাণ করেছে। এ ছাড়া তার আরো বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ আছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রতিটি গরুচুরির ঘটনায় পাঁচ-ছয়জন অংশ নিলেও এর নেতৃত্ব দিত জাকির নিজে। নিজের ট্রাকে চক্রের সদস্যদের নিয়ে রাজধানী থেকে চোরাই গরুসহ সে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যদের কাছে আটক হয়।
জাকিরের বিরুদ্ধে গরু চুরির ১০ মামলা রয়েছে। এর আগেও কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছে। জানা যায়, প্রতি সপ্তাহে সে আট থেকে ১০টি গরু চুরি করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার গরু চুরি করেছে বলে খবরে প্রকাশ। রাজধানীর কসাইদের কাছে কম দামে চুরি যাওয়া গরু বিক্রি করত সে। স্থানীয় বাজার ও বাসাবাড়ি থেকে এ গরু কসাইদের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত পুলিশের বহু চেকপোস্ট রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় ও সতর্ক থাকলে দীর্ঘদিন এক চোর এ কাজ করতে পারার কথা নয়।
ক্ষমতাসীন দলের লোকদের ছাগল চুরির মতো কাজের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ দেখেছি আমরা। হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরি, বাসাবাড়ি থেকে মানুষের অর্থকড়ি-গহনা চুরিসহ যত ধরনের চুরি রয়েছে- বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ব্যাপক হারে হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে দেশের চুরির ঘটনা ঘটেছে ৯ হাজার ৭৩৩টি। এর মধ্যে সিঁধেল চুরির ঘটনা আছে আড়াই হাজার। এর আগের বছর চুরির ঘটনা ছিল ৯ হাজার ৩১৯টি। পুলিশের কাছে অভিযোগের ভিত্তিতে চুরির এ ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে কয়েকটি চুরির ঘটনার উদাহরণ দেয়া হয়েছে। তাতে জানানো হয়েছে, ভুক্তভোগীরা হয়রানির ভয়ে থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। বোঝা যাচ্ছে, প্রকৃত চুরির ঘটনা ওই দুই বছরের চেয়ে আরো অনেক বেশি। ২০২১ ও ২০২২ সালে নিঃসন্দেহে এ ধরনের চুরির ঘটনা আরো বেড়েছে। এ কথা বলা অসঙ্গত নয় যে, আমাদের সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে। রাষ্ট্রের উপরের স্তরে প্রায় সব ধরনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। তারই বিস্তার ঘটেছে সর্বস্তরে, এখন তা পুরো জাতিকে গ্রাস করেছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে সংস্কার দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল