১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভোগ্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম

বাজারে তদারকির অভাব

-


দেশে এখন প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বাজারে ভোজ্যতেল, চিনি, মাছ-গোশত, আটা-ময়দা, সবজিসহ সব ধরনের খাদ্যের দাম বাড়ছে। কোনো কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে সরকারিভাবে যে দর নির্ধারণ করা হয়েছে, বাজারে তা-ও বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি দামে। এর পরও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
সাধারণত বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকলে ওই সব পণ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বহু পণ্যের সরবরাহে কমতি না থাকলেও দাম বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। কিন্তু সরকার তাতে লাগাম টানতে পারছে না। সরকার যে বাজার তদারকিতে ব্যর্থ, এর বড় উদাহরণ- নির্ধারিত দরে বাজারে চিনি না পাওয়া। অথচ একবারে চিনির দাম গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৬ টাকা বাড়িয়েছে। তবু চিনির বাজারে অস্থিরতা। এ ছাড়া ভোগ্যপণ্যের অন্যতম প্রধান উপাদান সবজির বাজার এখন আকাশচুম্বী। বাজারে বিভিন্ন সবজির দাম বাড়তে বাড়তে এখন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। যেসব ক্রেতা আগে কেজি পরিমাণ সবজি কিনতেন তারা এখন আধা কেজি-আড়াই শ’ গ্রাম করে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, বাজারে ৭০-৮০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই। সব ধরনের সবজি যদি এত বাড়তি দামে বিক্রি হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে তাদের নিত্যদিন চালাবে?

সবজির দাম কতটা বেড়েছে নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে সে কথা জানা যায়। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হয় ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বেগুন ৮০, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা এবং শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে চালকুমড়া একটি ৬০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা এবং কাঁচকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, আর করলা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাটশাক জোড়া আঁটি ৩০ টাকা, কলমি শাক জোড়া আঁটি ২০ টাকা, কচু দুই আঁটি ২০ টাকা, লাল শাকের জোড়া আঁটি ৩০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, শাপলা ডাঁটা ১০ টাকা, ডাঁটা শাক ১০ টাকা, সবুজ ডাঁটা ২০ টাকা আঁটিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ধনেপাতা ১০০ গ্রাম ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা দু’দিন আগেও ৬০-৬৫ টাকা ছিল। এ ছাড়া প্রতি কেজি আদা কিনতে হচ্ছে ৩০০ টাকার কিছু কম বা বেশি যা গত বছর একই সময় ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। বছরের ব্যবধানে আদার দাম তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। অন্য দিকে আমদানি করা চায়না রসুনের কেজিপ্রতি দাম ২০-৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।

এদিকে দেশে এখন খাদ্যপণ্যের অভাব না থাকলেও দাম বাড়ছে। আমদানি করা যেসব পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে, সেসব পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে শিল্প প্রতিমন্ত্রীর একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে’। এ পরিস্থিতির জন্য শুধু বৈশ্বিক সঙ্কটকে দায়ী করা যায় না; এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিমুনাফায় মেতে উঠেছেন। আসলে বাংলাদেশে অর্থনীতি-ব্যবসায়-বাণিজ্যে ও বাজারব্যবস্থাপনায় অসাধু ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী সিন্ডিকেট করে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন।
আমরা মনে করি, এ কারণে দেশে কার্যকর বাজারব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি। একই সাথে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রথমে শনাক্ত করতে হবে কারা নিত্যপণ্য মজুদ করছেন, তা খুঁজে বের করা। এটি সরকারের দায়িত্ব। সাথে সাথে তাদের আইনের আওতায় আনা। যেসব ব্যবসায়ী অতিমুনাফার লোভে সিন্ডিকেট গড়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তবে এটি তখনই সম্ভব, যখন সরকার ব্যবসায়ীবান্ধব না হয়ে সাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement