২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মেডিক্যাল ডিভাইসের অভাব

হৃদরোগ চিকিৎসা ব্যাহত

-


চিকিৎসা যেকোনো মানুষের মৌলিক অধিকার। তবে আমাদের দেশে এখনো সবাই চিকিৎসাসেবা পান না। অনেকে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যান। আবার এটিও আমাদের বাস্তবতা যে, দেশে চিকিৎসাব্যবস্থার যতটা উন্নত হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। তার পরও বলা যায়, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশের চিকিৎসাসেবার অগ্রগতি হয়েছে। ফলে এখন অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা হচ্ছে দেশে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হৃদরোগ চিকিৎসা। কিন্তু দুঃসংবাদ হলো, অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। অথচ হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর রোগ দেশে মৃত্যুর অন্যমত শীর্ষ কারণ।

হৃদরোগ একটি ঘাতক ব্যাধি। এতে মৃত্যুঝুঁকি বেশি এবং তা দেখা দেয় আচমকা। প্রায় সূত্রহীনভাবে হঠাৎ ‘হার্ট অ্যাটাকের’ ঘটনা ঘটে। এর চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। হৃদরোগের প্রকোপ বৃদ্ধি, এর প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা নিয়ে দুই দশকের বেশি সময় ধরে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে দেশে গবেষণা হয়েছে কম। কত মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে, কত মৃত্যু, কত মানুষ ঝুঁকিতে সেসব নিয়ে জাতীয় জরিপ বা গবেষণাভিত্তিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। গবেষক ও নীতিনির্ধারকরা নির্ভর করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমিত সংখ্যার ওপর। আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম এনসিডিপোর্টাল ডটকম বলছে, বাংলাদেশে বছরে যত মৃত্যু হয়, তার ৩৪ শতাংশের জন্য দায়ী হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর রোগ। সংখ্যার বিচারে ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।

এমন বাস্তবতায় সহযোগী একটি পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত চলছে ভাল্ব প্রতিস্থাপন, রিং পরানোসহ অন্যান্য সার্জারি। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালের খরচ বহনের সামর্থ্য নেই অনেক রোগীর। তাই গরিব রোগীদের নির্ভর করতে হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল- সরকারি এ তিন প্রতিষ্ঠানের ওপর। কিন্তু ১০ মাস ধরে ভাল্ব ও অক্সিজেনেটর সঙ্কট চলছে এসব হাসপাতালে। শুরুতে মজুদ করা ডিভাইসে সার্জারি চললেও আড়াই মাস ধরে তাও ফুরিয়ে এসেছে।
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ঢিমেতালে চললেও অন্য দুই হাসপাতালে প্রায় বন্ধের পথে হৃদরোগ চিকিৎসা। অক্সিজেনেটরের অবস্থাও একই। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীর জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ভাল্বের কিছুটা সঙ্কট এখনো রয়েছে, পুরোপুরি কাটেনি’। এ দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় আড়াই মাস ধরে ভাল্ব প্রতিস্থাপন ও বাইপাস সার্জারি বন্ধ রয়েছে। টেন্ডার জটিলতা, আমদানি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ডলার সঙ্কটে আমদানিকারকরা সরবরাহ করতে পারছেন না। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও একই পরিস্থিতি।

এ দিকে ভাল্ব সঙ্কটের মধ্যে বেড়েছে স্টেন্টের দাম। হৃদরোগে আক্রান্ত কিছু রোগীর রক্তনালী সরু বা বন্ধ (ব্লক) হয়ে যায়। রক্ত চলাচল সচল রাখতে স্টেন্ট বা রিং ব্যবহার করা হয়। গত ১ মার্চ থেকে রিং ও পেস-মেকারের দাম ২০-৩৫ শতাংশ বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর (ডিজিডিএ)। নতুন দাম অনুযায়ী, এত দিন যে রিংয়ের মূল্য ছিল ৭২ হাজার টাকা, সেটি এখন নিতে হবে ৮২ হাজার টাকায়। এক লাখ আট হাজার টাকার রিং এক লাখ ৩৫ হাজার এবং দেড় লাখ টাকার রিং পেতে গুনতে হবে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আবার যে পেস-মেকারের দাম এত দিন ৯৫ হাজার টাকা ছিল, এখন তা নিতে হবে এক লাখ ৪০ হাজার টাকায়।


অত্যাবশ্যকীয় মেডিক্যাল ডিভাইসের দাম বেড়ে যাওয়ায় হৃদরোগের চিকিৎসাব্যয় আরো বাড়বে। এতে গরিব রোগীদের পক্ষে চিকিৎসা নেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। যেখানে এমনিতে এ রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল; সেখানে এর ডিভাইসের দাম বাড়ানো কতটুকু বিবেচনাপ্রসূত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। রোগীদের কথা বিবেচনায় না নিয়ে ওষুধ প্রশাসন ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করল কি না সে বিষয়টি সামনে চলে আসে। অথচ প্রশাসনের উচিত ছিল হৃদরোগের মেডিক্যাল ডিভাইসের সঙ্কট মোকাবেলার পদক্ষেপ নেয়া।

 


আরো সংবাদ



premium cement