২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মিয়ানমার থেকে আসছে চোরাই গরু

দেশের গো-সম্পদ রক্ষা করুন

-

নয়া দিগন্তের উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মিয়ানমার থেকে আনা গরু চোরাকারবারিরা। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পরে আবার তারা সক্রিয় হয়ে উঠছে। সীমান্ত পথে মিয়ানমার থেকে গরুর বড় বড় চালান আনা হচ্ছে। মিয়ানমারের গবাদিপশুর মধ্যে ক্ষুরারোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এই কারণে দেশটি থেকে পশুর আমদানি বন্ধ করে দেয় প্রতিবেশী থাইল্যান্ড। এই রফতানি নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি পোষাতে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে কক্সবাজার, বান্দরবান, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে বিপুল গবাদি পশুর পাচার অব্যাহত রাখছে। এর চোরাচালান আরো বেড়েছে বলে জানায় সীমান্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত এ চোরাচালান বন্ধ করা না গেলে দেশের গবাদি পশুর মধ্যে মারাত্মক ক্ষুরারোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আসা গরু-মহিষের কারণে বিপাকে দেশীয় পশু খামারি ও ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ একাধিক উপজেলায় মিয়ানমারের গবাদিপশু দেদার ঢুকছে বলে অভিযোগ। এসব পশুর অধিকাংশ রাখা হয় রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়ন, কচ্ছপিয়া ও চকরিয়ার বিভিন্ন স্থানে। এমনকি মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা ওসব পশু বেচা বিক্রির জন্য হাটও বসছে কোনো কোনো এলাকায়। গবাদিপশু পাচারের সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। রাজনৈতিকভাবে একে অন্যের প্রতিপক্ষ হলেও পাচারসংশ্লিষ্টতা ও ব্যবহার ক্ষেত্রে তারা একাত্ম।
পশুর খামারিরা জানান, সীমান্ত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে হাটে মিয়ানমারের অনেক গরু-মহিষ বিক্রি হচ্ছে। সেসব হাট-বাজারেও দেশী গরু বিক্রি করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি, বিক্রি করতে গেলেও দেশী গরুকে তারা ‘চোরা চালানের পশু’ আখ্যা দিয়ে জব্দ করে নিয়ে যায়। স্থানীয় পর্যায়ে এই বিষয় নিয়ে বিতর্ক ও একের পর এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় হাটে চোরাচালানের গবাদিপশু বিক্রি বন্ধে কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন যদিও তা খুব একটা কার্যকর নয় বলে স্থানীয় খামারিরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, হাটে দেশী গরু-মহিষ বিক্রি করতে এখন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের প্রত্যয়নপত্রের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে হয়রানিতে পড়েন সাধারণত দরিদ্র কৃষক অথবা খামারিরা।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলী কদম, লামা এবং নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে মিয়ানমার থেকে প্রবেশ করা এসব পশুহাট বসে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার মানিকপুর বাজার, ফাঁসিয়াখালীর হাঁসের দীঘি ও ডুলাহাজারার রংমহল এলাকায়। এখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক গবাদিপশু বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি বিজিবি অভিযান চালিয়ে বান্দরবান জেলার লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি, রামুর গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া এবং চকরিয়ার মানিকপুর থেকে অনেক গরু মহিষই জব্দ করেছে। এ ছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির নিয়ন্ত্রণাধীন তীরডেপা বিজিবি ক্যাম্প থেকে মানিকপুর এলাকায় অভিযান চালিয়েও গরু জব্দ করা হয়। পশুগুলো উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ইসমাইল মো: নোমান বলেন, সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, গরুর ক্ষুরারোগ। এ রোগ একবার ছড়িয়ে পড়লে দেশীয় গবাদিপশুও ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হবে। অন্যদিকে, মিয়ানমারের গরু ঢোকায় স্থানীয় খামারিরা লোকসানে পড়ছেন। খামারি আমানুল হক বলেন, বর্তমান বাজারে পশুখাদ্যের দাম বেশ চড়া। তার পরও বেশি দামে খাদ্য কিনে গবাদিপশু পালন করছি। কিন্তু চোরাই পথে গরু ঢোকার কারণে এর দাম পাচ্ছি না। তাই লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমাদের খামারে পালিত গবাদিপশুকে পাচারের গরু অভিযোগ তুলে বিক্রি করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। আমরা পড়েছি উভয় সঙ্কটে। আয়ুব আলী ও ছুরত আলম নামে দুই ব্যবসায়ীও একই অভিযোগ তুলে বলেন, চোরাই গরু জব্দ করতে গিয়ে খামারি ও কৃষকের গরুও জব্দ করে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।
স্থানীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, দেশের সীমান্ত পাহারায় বিজিবি সব সময় প্রস্তুত। সীমান্ত চোরাচালান ও অবৈধ গরু প্রবেশ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। গরুর হাট বসা ও পাড়া মহল্লায় পাচার বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।
গবাদিপশুসমেত যেকোনো ধরনের চোরাচালান রোধে কর্তৃপক্ষ আশু পদক্ষেপ নেবেন এবং দেশের গো-সম্পদকে রক্ষা করবেন বলে জনগণ আশা করছে। অন্যথায় বাংলাদেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে যা অপূরণীয়।


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার

সকল