৩১ মে ২০২৩, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ১০ জিলকদ ১৪৪৪
`
র‌্যাব হেফজাতে আবারো মৃত্যু

জীবনের নিরাপত্তা যেখানে ঠুনকো

-

বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের জীবন চরম অনিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। প্রতিদিন বহু মানুষ নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন, কেউ প্রাণহানির শিকার পর্যন্ত হচ্ছেন। এসব ঘটনার বেশির ভাগই থেকে যাচ্ছে রহস্যাবৃত্ত। প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে জোরালো তদন্ত নেই। অন্যায়ের শিকার হওয়ার পরও মানুষ কোনো প্রতিকার পায় না। এ অবস্থায় খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্রবেও মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’জন মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যার সাথে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাবের নাম এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতায় কারো প্রাণ গেলে সে ক্ষেত্রে তাদের একতরফা বয়ান মেনে নিতে হয়। অর্থাৎ সরকারি বাহিনীর বর্ণনা সত্য ধরতে হবে, এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য আমলে নেয় হয় না।
১৭ মার্চ র‌্যাবের এক অভিযানের সময় ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ নিহত হন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনার বিবরণে দুটো সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী চিত্র পাওয়া যায়। মধ্যরাতে সাদা পোশাকে র‌্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জের বারগাঁও গ্রামে এক ‘খুনের আসামি’ ধরতে যায়। ওই ব্যক্তিকে আটকের সময় পরিবারে লোকজন তাদের পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় প্রকাশের বদলে র‌্যাব সদস্যরা হুমকি দেন। তখন ডাকাত সন্দেহ প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে সাদা পোশাকের লোকদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হন। এ অবস্থায় বাহিনীর সদস্যরা ওই বৃদ্ধকে পেটে ঠেকিয়ে গুলি করে ও অন্য একজনের দুই পায়ে গুলি করে। একই ঘটনার বর্ণনায় র‌্যাব বলেছে, একটি অভিযান চালানোর সময় একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাদের আক্রমণ করে তারাও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। র‌্যাবের দাবি, ওই অভিযানে তাদের পরিচয় প্রকাশ্যে ছিল। এক সপ্তাহ পর আরেকটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে র‌্যাব সংশ্লিষ্টতায় নওগাঁয়। ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনকে গত বুধবার অফিসে যাওয়ার পথে র‌্যাব-৫ উঠিয়ে নিয়ে যায়। এর কয়েক ঘণ্টা পর তাকে স্থানীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করে র‌্যাব। পরে শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ওই নারীর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। মাথায় একটি লাল দাগ পাওয়া গেছে। অথচ তাকে সুস্থ অবস্থায় র‌্যাব ধরে নিয়ে গিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। বাহিনীর হেফাজতে এ ধরনের বহু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। সব ক্ষেত্রে একই ধরনের সাদামাটা একটি কাহিনী বর্ণনা করা হয়ে থাকে। মানুষ সেটি বিশ্বাস করছে কি না সে ব্যাপারে কোনো দায় নেই সংশ্লিষ্ট বাহিনীর। পরের ঘটনায় র‌্যাব একটি সাদা মাইক্রোবাসে ওই নারীকে তুলে নিয়ে যায়। আর আগের ঘটনায় সাদা পোশাকে ছিল। বিগত এক যুগে সাদা পোশাকে বহু অভিযান আমরা দেখেছি। এসবের বেশির ভাগ প্রকৃতপক্ষে কারা পরিচালনা করেছে তা শনাক্ত হয়নি। যারা গুম হয়েছেন তাদের স্বজনরা পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো স্তরে এমন অভিযান চালানো হয়েছে বলেও স্বীকৃতি পাননি। যে কারণে দেশে বহু মানুষ এখনো গুম হয়ে আছেন। এ ছাড়া নিখোঁজ ব্যক্তিদের একটি বড় তালিকাও পাওয়া যাচ্ছে। কিছু ব্যতিক্রম পাওয়া গেছে যেখানে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর অভিযানের একটি গৎবাঁধা বর্ণনা দিয়েছে- হেফাজতে মৃত্যু বা কথিত অ্যানকাউন্টারের ঘটনায়। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, গ্রেফতারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের পরিচয় দেখাতে বাধ্য। তাদের কাছে গ্রেফতারের বৈধ নির্দেশনামাও থাকতে হবে। কিন্তু উচ্চ আদালতের আদেশ মানা হচ্ছে না। সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীকে কোনো জবাবদিহিও করতে হচ্ছে না। উচ্চহারে হেফাজতে মৃত্যু ও গুমের ঘটনা হ্রাস পেয়েছে র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর। তারপরও সেটি থামেনি। সুলতানার মৃত্যুকে র‌্যাব হেফাজতে ধরা হলে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞার পর এটি সংস্থাটির অধীনে নাগরিকদের ষষ্ঠ মৃত্যুর ঘটনা। এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা দেশের মানুষ চান না। বাহিনীগুলোর অবশ্যই নাগরিকের জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। বন্ধ হতে হবে হেফাজতে মৃত্যু ও অ্যানকাউন্টারের ঘটনা।


আরো সংবাদ


premium cement
মান্দায় ঘরের মেঝেতে ঘুমাতে গিয়ে সাপের কামড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু অনলাইন নিউজ পোর্টাল পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনার পরিকল্পনা করছে সরকার: তথ্যমন্ত্রী নরসিংদীতে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিবের বাড়িতে আগুন মান্দায় ট্রাক্টরের চাপায় নারী নিহত : আহত ২ ডেঙ্গুকে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে : মেয়র তাপস রাজশাহীতে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের মানববন্ধন জুনে সুইজারল্যান্ডে সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী ওজোপাডিকোর সাবেক এমডি-সচিবসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা সিলেট স্টেডিয়াম দেখে খুশি নিউজিল্যান্ড পরিদর্শক দল রাজশাহীতে কলেজছাত্রের আত্মহত্যা প্রবাসী ও রফতানি আয়ে ফের বাড়ল ডলারের দাম

সকল