২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পুলিশে বাড়ছে মাদকসেবী

আর কত অবক্ষয়

-

বেড়ায় ক্ষেত খেলে তার প্রয়োজন কী? রাষ্ট্রব্যবস্থায় নানা উদ্দেশে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান যদি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারে; সেটি থাকলেই কী, না থাকলেইবা কী। দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশনের যাত্রা সেদিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আরো এক ধাপ তলানিতে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সদস্যদের একটি অংশ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন তো করছেনই না, উল্টো ক্ষতির পরিমাণ বাড়াচ্ছে। এমনকি করছেন অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে- একই সংস্থার অন্য একটি বিভাগ অপরাধ তদন্ত বিভাগের কর্মকর্তাকে অপহরণ করে অর্থ আদায়ের। যেকোনো ধরনের শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলে তা গুরুতর হিসেবে সামনে আসার কথা। কিন্তু দেশে এমন ঘটনা স্বাভাবিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। একজন সাধারণ মানুষ একটি অপরাধ করলে যেভাবে বিবেচিত হয়; সেভাবে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অপরাধও গণ্য করা হচ্ছে।
মাদক বাংলাদেশে ভয়াবহ একটি সমস্যা। যুবসমাজের একটি বড় অংশ অধঃপাতে যাচ্ছে মাদকের ছোবলে। সারা দেশে গড়ে উঠেছে মাদক বিক্রেতাদের শক্তিশালী চক্র। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বানের পানির মতো ঢুকছে এটি। এর মোকাবেলায় পুলিশের বিশেষায়িত বিভাগ রয়েছে। তবে মাদক দমনে দেশে উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতা দেখা যায়নি; বরং এখন খবর হচ্ছে, পুলিশ বাহিনীর একটি অংশ নিজেরাই মাদকাসক্ত। শুধু তাই নয়; একটি অংশ চোরাকারবারি চক্রের সাথে ঘনিষ্ঠ। তারা মাদক কারবারিদের কৌশলে পর্যুদস্ত করবে তা নয়; বরং মাদক কারবারিরা পুলিশের কিছু সদস্যকে ছলেবলে কৌশলে মাদকাসক্ত বানাচ্ছে। এমনকি বানিয়ে নিচ্ছে চোরাকারবারি চক্রের সদস্য।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) কয়েক বছর হলো আংশিক মাদক পরীক্ষা শুরু হয়। তাতে ১২৬ জনকে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশের নি¤œ পদবির সদস্যদের এ পরীক্ষা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশের উঁচু পদধারী ব্যক্তিদের মধ্যে নানা অসঙ্গত আচরণ লক্ষ করা গেছে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটতেও দেখা গেছে। কিন্তু কেন তাদের মধ্যে বঞ্চনা ও অস্থিরতা তা নিয়ে কার্যকর তদন্ত দেখা যায়নি। ডিএমপির মাদকাসক্ত সদস্যদের মধ্যে মাত্র একজন পরিদর্শক ও ১১ উপপরিদর্শক রয়েছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, শুধু সন্দেহভাজনদের মাদক পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে শুধু কনস্টেবল ও নি¤œ পদবির কর্মকর্তাদের দেখা যাচ্ছে।
আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনীর ভেতরে বড় ধরনের অবক্ষয় ঘটেছে। দেশব্যাপী তাদের বিরুদ্ধে মানুষের ব্যাপক হারে অভিযোগের সংখ্যা দেখে তা বোঝা যায়। ছিনতাই, হত্যা, অপহরণ, মাদক কেনাবেচা, জমি দখল, ধর্ষণ, প্রতারণাসহ নানা অপরাধে পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও বাহিনীর সব ইউনিট প্রধানের কাছে অভিযোগের পাহাড় জমছে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সাড়ে চার বছরে ৬১ হাজারের বেশি অভিযোগ এসেছে বলে খবরে প্রকাশ। ২০১৮ সালে ১৪ হাজার ৪০২ জন, পরের বছর এ সংখ্যা বেড়ে হয় ১৪ হাজার ৫১২ জন, ২০২০ সালে আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২১২ জন ও ২০২১ সালে ১৬ হাজার ৪১৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে মাদকাসক্ত সদস্যের সংখ্যা আলাদা করে যাচাই করা না হলেও আঁচ করতে অসুবিধা হয় না যে, সেটিও বেড়েছে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বর্ণনা করেন, পুলিশ সদস্যরা নিজেরা কিভাবে মাদকসেবী ও মাদক কারবারি চক্রের জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে তাদের মাদক সেবনের প্রতি উৎসাহিত করা হয়। পরে খরচ বহনের সামর্থ্য অর্জনে তারা মাদক চক্রের সাথে এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর সদস্যরা সহজে মাদকের কাছে হার মেনে যাবেন; এটি প্রত্যাশিত নয়। বর্তমানে পুলিশের প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
যে বাহিনী নিজের অধঃপতন ঠেকাতে পারছে না, সেটি কিভাবে সাধারণ মানুষের সহায়তা করবে। আমরা মনে করি, পুলিশ বিভাগের মধ্যে বড় ধরনের সংস্কার দরকার। কারণ, অবক্ষয় রোধ করা না গেলে আমাদের জন্য বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।


আরো সংবাদ



premium cement