২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

গণতন্ত্র অবারিত হোক

-

আজ ২৬ মার্চ, আমাদের স্বাধীনতা দিবস। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকী উদযাপিত হবে। জাতীয় জীবনে প্রতি বছরই এই ক্ষণটি বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়ে থাকে।
একটি জাতির ইতিহাসে ৫২ বছর খুব দীর্ঘ একটা সময় নয়। তবে বিগত কয়েক যুগে জাতিসত্তার যে বিকাশ ও উন্নয়ন হয়েছে, সেটি লক্ষণীয়। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সাথে প্রায় একই সময়ে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলো কিংবা যেসব দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার সাথে বাংলাদেশের বিশেষ মিল রয়েছে সেসব রাষ্ট্রের মধ্যে অনেক দেশ প্রভূত উন্নতি করেছে। যেমন- সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কথা বলা যায়। দেশ দু’টি এখন উন্নত দেশগুলোর অন্যতম। এই দেশগুলো কেবল যে জনসাধারণের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আমূল পাল্টে দিয়েছে তাই নয়, সুশাসনও প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। গণতন্ত্র পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। নাগরিকরা রাজনৈতিক সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ণ মর্যাদা ভোগ করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল পটভূমি রয়েছে। এ দেশের মানুষ শোষণ বঞ্চনা ও গণতান্ত্রিক মুক্তির অভিপ্রায়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করেছে। এ জন্য দেশের মানুষ রক্ত দিয়েছেন। অনেক মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। এক কথায়, আমাদের স্বাধীনতা চড়া দামে কেনা। স্বাধীনতার চেতনা ছিল শোষণ-নিপীড়নমুক্ত অবাধ মুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। আজ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয় স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নকারী সেসব বীরদের। একই সাথে আমরা যথেষ্ট সন্তুষ্টিও প্রকাশ করতে পারি ৫২ বছরের অর্জন নিয়ে। দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ অগ্রসর হয়েছে। তবে আমাদের অপূর্ণতাও রয়ে গেছে। সমসাময়িক অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে। প্রকৃত বাস্তবতা হলো দুর্বল গণতন্ত্র ও সুশাসনের অভাবে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার লক্ষ্যে এখনো অনেকটা পথ বাকি রয়েছে আমাদের।
দেশ স্বাধীন করেছি এমন একটি দেশ পাওয়ার জন্য যেখানে মানুষের মতপ্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা থাকবে। প্রত্যেকে তার মতামত স্বাধীনভাবে ব্যক্ত করতে পারবে। আজ মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার নানাভাবে সীমিত করা হয়েছে। মানুষের মুখ বন্ধ রাখার নানা কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা আছে। এ ছাড়া গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা আরো করুণ। নির্বাচনব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সব ক্ষেত্রে সীমাহীন স্বাধীনতা ভোগ করছেন। এর বিপরীতে বেশির ভাগ মানুষের গণতন্ত্র চর্চার পথ প্রায় পুরোপুরি রুদ্ধ। অথচ স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমাদের একটি উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকতে পারত।
বলা হচ্ছে, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটেছে। ক্ষমতাসীনদের বয়ান অনুযায়ী আমরা এখন উন্নয়নের পথে দ্রুত ধাবমান। আমাদের লক্ষ্য এখন উন্নত দেশ হওয়া। বাস্তবে বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। মানুষের মধ্যে ধনী-গরিব ব্যবধান আরো বিস্তৃত হয়েছে। সমাজে এখনো আক্ষরিক অর্থে বিপুল দারিদ্র্য বিরাজ করছে। অন্য দিকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নেই সাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। একশ্রেণীর জন্য দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ সঞ্চিত করার পথ খুলে দেয়া হয়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি অনেক আগে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারতাম না কিংবা দেশকে দাঁড় করাতে পারতাম না উন্নত দেশের কাতারে? কেন পারিনি, তা জানতে স্বাধীনতা দিবসের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আত্মসমালোচনার প্রয়োজন আছে।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তিতে দাঁড়িয়ে আমরা আশাবাদী হতে চাই। এ দেশে নতুন চেতনার বিকাশ হবে। মানুষের মধ্যে বৈষম্য দূর হবে। মানুষের ন্যায্য গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement