২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ফেনীতে পরিবহনে চাঁদাবাজি

বন্ধ করা প্রশাসনের দায়িত্ব

-


নয়া দিগন্তের ফেনীর অফিস জানান, ফেনীতে পরিবহন থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে। এতে এখন চালকরা অতিষ্ঠ।
কাগজপত্র পরীক্ষার নামে গাড়ি থামিয়ে কোনো না কোনো অজুহাতে দাবি করা হয় হাজার টাকারও বেশি। টাকা না দিলে মামলাসহ হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন মালিক ও চালকরা। হাইওয়ে পুলিশের সাথে চুক্তি না থাকায় আটকের শিকার হয় ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান। সিএনজি, অটোরিকশাও হাইওয়ে পুলিশের বড় আয়ের খাত। তাদের টাকা দিলে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো যায়, না দিলে কেবল সড়ক পার হতেও আটক করা হয়। রিকুইজিশনের ভয় দেখিয়ে মাইক্রো বাস থেকে আদায় করা হয়েছে বিশাল অঙ্কের টাকা।
কুমিল্লা থেকে ফেনী ও নোয়াখালীতে ট্রাকযোগে আসা সবুজ ও করিম বলেন, নিয়মিত মহিপালে হাইওয়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে অবৈধ মালামাল ও কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে কাঁচামাল, পণ্য বোঝাই ট্রাক ও পিকআপ থেকে ২০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকে।
একাধিক চালক জানান, কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ‘চা-নাশতা’র কথা বলে তারা চাঁদা আদায় করে থাকে। মামলার ভয়ে চালকরা প্রার্থিত চাঁদা দিয়ে দেন।
আরেকজন বলেন, আমার মিনি ট্রাক আছে। দু’দিন আগে ফেনী হাইওয়ে পুলিশ আমার গাড়ি আটক করে কাগজপত্র চেক করার পরে দেখে, সব ঠিক আছে। কিছুক্ষণ পরে হাইওয়ে পুলিশ গাড়িতে ইয়াবা আছে বলে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। দাবি করা সে টাকা দিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে নিলাম।


লেমুয়া এলাকার সিদ্দিক মিয়া বলেন, লেমুয়া ট্রাঙ্ক রোড থেকে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় হাইওয়ে পুলিশ সিএনজি অটোরিকশা আটক করে ১০ হাজার টাকা দিতে বলে। অথচ সারা দিনে ৫০০ টাকাও আয় করতে পারি না। প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার করে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সিএনজিটা ছাড়িয়ে নিয়ে আসি।
লেমুয়া উত্তর চাঁদপুর এলাকার আশিক জানান, সিএনজি চালিয়ে আমরা জীবনযাপন করি। তিন দিন আগে হাইওয়ে পুলিশ গাড়িটি বিসিক রাস্তার মাথায় আটক করে আমার নামে সাত হাজার ৫০০ টাকার মামলা দিয়ে দেয়। মামলার টাকা নিয়ে থানায় গেলেও গাড়ি ছাড়ছে না। যিনি মামলা দিয়েছেন, তাকেও পাই না। এ সময়ে এক দালাল ১০ হাজার ৫০ টাকা দাবি করেন। নিরুপায় হয়ে আট হাজার টাকা দিয়ে আর বিকাশে দুই হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে যাই।
হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্য জানান, মহিপাল হাইওয়ে পুলিশের ওসির সাথে ট্রান্সপোর্টের মাসিক চুক্তি করা থাকে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। কেএইচএফ ট্রান্সপোর্ট, আরআর ট্রান্সপোর্ট, নারায়ণগঞ্জ ট্রান্সপোর্ট, কুমিল্লা ট্রান্সপোর্ট, টিএমটি, বিএসআরএম, এমএমআই ট্রান্সপোর্ট, সাতক্ষীরা ট্রান্সপোর্ট, জাহাঙ্গীর অনলাইন সিম, খায়ের ট্রান্সপোর্ট, গৌরীপুর ট্রান্সপোর্ট, ফাঁকি ট্রান্সপোর্ট, বিদ্যুৎ সাতক্ষীরা ট্রান্সপোর্ট থেকে পুলিশের কাছে বড় অঙ্কের টাকা আসে। এসব ট্রান্সপোর্টের গাড়ি কোনো প্রকার ধরপাকড় কিংবা তল্লাশির শিকার হতে হয় না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মহিপাল হাইওয়ে থানার ওসিকে ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি। মেয়ে জানান, ‘আব্বু অসুস্থ তো, এ জন্য ফোন ধরছেন না।’
ফেনীতে সর্বপ্রকার পরিবহনে বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধ করা প্রশাসনের গুরু দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। তারা এ দায়িত্ব পালন করবেন, এ আশা কি করা যায় না?

 

 


আরো সংবাদ



premium cement