২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বোরো আবাদে বাড়তি ব্যয়

খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির শঙ্কা

-

দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এখনো কৃষি। কৃষিজ উৎপাদন বহুগুণে বেড়েছে বলেই দেশের মানুষ এখনো দুমুঠো খাবার মুখে তুলতে পারছে। কৃষকই এখনো আমাদের অস্তিত্বের অন্যতম প্রধান ভরসা। কোভিড-১৯ মহামারীর মতো দুঃসময়ে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়লেও সচল ছিল একমাত্র কৃষির চাকা। কিন্তু সেই কৃষি ও কৃষিজীবীরা এখন সঙ্কটে রয়েছেন।
চলতি মৌসুমের বোরো আবাদ নিয়ে কৃষক দুশ্চিন্তায় আছেন। কারণ, ফসল উৎপাদনে দরকারি সব উপকরণের দাম বেড়েছে। সার-ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এসব কারণে উৎপাদিত ফসলের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাবেন কিনা সে জন্য সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বোরো চাষিরা। অথচ বোরো আবাদ প্রায় পুরোটা সেচনির্ভর।
চলতি মৌসুমে দেশে ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ বা ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হবে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে। বোরো মৌসুমে সারা দেশে প্রায় ১৬ লাখ টন ডিজেলের ব্যবহার হয়। বাকি ৩০ শতাংশ জমিতে সেচ দেয়া হবে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে। এবার বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ক্ষেত্রে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া কীটনাশক, শ্রমিক ও যানবাহনে পরিবহন খরচ বৃদ্ধিতেও অতিরিক্ত প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে। অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে ইউরিয়ার প্রয়োজন হবে প্রায় ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন।
নিশ্চিতভাবে এ বাড়তি ব্যয়ের প্রভাব পড়বে কৃষিতে। বেড়ে যাবে ধানের উৎপাদন খরচ। স্বাভাবিকভাবে বাজারে ধানের দামও বাড়বে। সেই সাথে বাড়বে চালের দাম।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি মানুষের জন্য এরই মধ্যে দুর্বিষহ। শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের সাথে পাল্লøা দিয়ে বেড়েছে কৃষিপণ্যের দাম। শাক-সবজি, মাছ, গোশত, ডিমসহ সব ধরনের খাদ্যমূল্য মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
স্থানীয় পর্যায়ের কৃষকদের সাথে কথা বলে গণমাধ্যমে যেসব খবর প্রকাশ পাচ্ছে তাতে দেখা যায়, কৃষকরা বলছেন- এবার তাদের বোরো চাষে ব্যয় বাড়বে গত বছরের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। গত বছর ডিজেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ৯৪ টাকা। এবার সেটি ১২৪ টাকা। বিদ্যুতের দাম সরকার গত ছয় মাসে বাড়িয়েছে চারবার। ফলে সব ধরনের সেচপাম্পের পানি নিতে বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে কৃষককে।
গত বছর ইউরিয়ার দাম ছিল প্রতি কেজি ১৮ টাকা। এবার সেটি বাড়িয়ে সরকার করেছে ২৪ টাকা। কিন্তু ডিলাররা সবসময় নির্ধারিত দামে কৃষকের কাছে সার বিক্রি করেন এমন নয়। অনেক কৃষককে বাড়তি মূল্যে কিনতে হয়।
চাষিরা বলছেন, উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার ধানের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে মণপ্রতি অন্তত তিন থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। সার, ডিজেল, বিদ্যুৎ, কীটনাশকসহ আরো অন্যান্য খাতে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে তিন হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বোরো আবাদের খরচ জোগাতে কৃষককে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, এ অবস্থায় কৃষক যদি ন্যায্য দাম না পান তাহলে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হবে। হুমকিতে পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা। তবে এ কথা ঠিক, সরকার এবার কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও নিয়েছে; যাতে করে কৃষকের সমস্যা কিছুটা কমবে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো কৃষকের কাছে বকেয়া পাওনা থাকলেও সেচকাজে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে না। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement