২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
চীনা বেলুন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে

বৈশ্বিক উত্তেজনায় আরো উসকানি

-

বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নীতি আদর্শ সস্তা বুলি হিসেবে থেকে গেল। প্রভাবশালী দেশ নিজের ঘোষিত নীতি মানে না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপী ইউনিয়নের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বিশ্ব মানুষের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় সবসময় একই ধরনের নীতি নেয় না। দেশ, অঞ্চল ও ধর্মীয় পরিচয় ভেদে নীতি প্রয়োগে বৈষম্য ও ভিন্নতা দেখা যায়। অপর দিকে রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলোর ঘোষিত বৈশ্বিক নীতির মধ্যে ন্যায্যতার বালাই নেই। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় এসব দেশের কোনো অঙ্গীকার নেই। সব হিসাব-নিকাশ স্বার্থ ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক। এসব দেশের বৈশ্বিক বিশ্বস্ততা অবিশ্বস্ততায় ভরা। ভবিষ্যতে কী করতে যাচ্ছে; সে ব্যাপারে কোনো ধারণা করার উপায় নেই। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে এক চীনা নজরদারি বেলুন ওড়ার পর বেইজিংয়ের প্রতি সন্দেহ আরো বেড়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র গত শনিবার বেলুনটি ভূপাতিত করেছে। ধ্বংসাবশেষ পড়েছে আটলান্টিক মহাসাগরে। এর আগে সেটিকে ধ্বংস করা যাচ্ছিল না মানুষের ওপর আছড়ে পরে ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কায়। খবরে জানা যায়, বেলুনটি কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকে। এটিকে মনটানার আকাশে ভাসমান অবস্থায় শনাক্ত করে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন। এ অঙ্গরাজ্যে আন্তঃমহাদেশীয় পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ রয়েছে। পাশের অঙ্গরাজ্য নর্থ ডাকোটায় পরমাণু অস্ত্র উৎক্ষেপণ ঘাঁটি। এ ছাড়া এর গতিপথে দেশটির স্পর্শকাতর প্রতিরক্ষা স্থাপনা রয়েছে। এ ধরনের বেলুনে ক্যামেরা, রাডার ও রেডিও ডিভাইস থাকে। এগুলো নিখুঁত ছবি তুলতে সক্ষম। ভূমি থেকে ৮০ হাজার ফুট উঁচুতে ওড়ায় জোরদার নজরদারিতে থাকে না এবং এটি রাডার ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে পারে।
চীনের দাবি, এটি একটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী বেলুন। আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা ছাড়া এর কোনো সামরিক উদ্দেশ্য নেই। বেলুনটির আমেরিকায় প্রবেশকে ‘অনিচ্ছাকৃত’ বলছে বেইজিং। এ জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছে। এ ঘটনা নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের আসন্ন চীন সফর বাতিল করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি যে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে, ব্লিঙ্কেনের সফর বাতিলে তা সহজে অনুমেয়। ওয়াশিংটন এটিকে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। এ দিকে বেলুনটি ধ্বংসের পর চীনও কিছুটা কঠোর বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, বেসমারিক একটি বেলুন ধ্বংস করে যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তবে বেলুনটি নিয়ে বিশ্লেষকদের মতামত আসতে শুরু করেছে। কেউ বলছেন, চীন এটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি সক্ষমতা পরীক্ষা করেছে। ভুলক্রমে এটি আমেরিকার আকাশে চলে গেছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ দক্ষিণ আমেরিকার আকাশেও চীনা বেলুন উড়েছে। একসাথে এত ভুল হয় কিভাবে?
চীনের আপাত সরল স্বীকারোক্তির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোরতা প্রদর্শনের পর এ নিয়ে দ্বিধা সৃষ্টি হয়েছে। বেসামরিক কোনো কাজ; এমনকি তা চীন করলেও বেইজিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ সফর বাতিল হওয়ার কথা নয়। মূলত চীনকে নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির বিপুল অর্থনৈতিক শক্তি ও দ্রুতগতিতে বেড়ে চলা সামরিক শক্তির আসল লক্ষ্য কী, সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। সীমান্তের ছোট দেশগুলোর সাথে এর পেশিশক্তি প্রদর্শনের নজির দেখা যাচ্ছে। তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অনেকটা জাপানও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিকায়নের পথে হাঁটছে চীনকে বিশ্বাস করতে না পারায়।
এ দিকে ইউক্রেন ঘিরে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয়দের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব বিরাজমান। যুদ্ধ সরাসরি ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও যেকোনো সময় এটির বিস্তার ঘটতে পারে। এ অবস্থায় চীনের বৈশ্বিক তৎপরতা সন্দেহ আরো বাড়াচ্ছে। আমেরিকার সাথে চীনের দ্বন্দ্ব বাড়লে বিশ্বে তা আরো বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। যুদ্ধ, মহামারী ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে এটি হবে গোদের উপর বিষফোঁড়া। এমন উত্তেজনা বিশ্ববাসীর কারো কাছে কাম্য নয়।


আরো সংবাদ



premium cement