২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সন্ত্রাস চাঁদাবাজিতে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা

শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতি দেউলিয়া হবে

-

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে চুরি ছিনতাই চাঁদাবাজি সিটবাণিজ্য ও সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ উঠছে। শপিংমল বাণিজ্যকেন্দ্রের আশপাশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগ নেতারা এসব কাজে জড়িত বলে প্রায়ই খবর প্রকাশ পাচ্ছে। অভিযোগ আছে, ছাত্রলীগ নেতারা নিয়মিতই দোকানপাট ও বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে মাসোয়ারা আদায় করছে। তারপরও ব্যবসায়ীদের ওপর তাদের হুমকি ধমকি ও চাঁদাবাজি থেমে নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও তারাই অনেক ক্ষেত্রে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। একই অপরাধ বারবার করার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, তারা কতটা বেপরোয়া। এর কারণ তাদের ওপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের আইনি বা অন্য কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। দেশের আইনে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত অবৈধ কর্মকাণ্ড করার পরও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে। ফলে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে।
গত শুক্রবার একটি জাতীয় দৈনিক ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে দুটো খবর পাশাপাশি ছেপেছে। প্রথম খবরে জানা যাচ্ছে, ঢাবি অমর একুশ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পার্শ্ববর্তী বঙ্গবাজারের এক ব্যবসায়ীকে চাঁদা দেয়ার জন্য ভয় দেখিয়ে বাধ্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পত্রিকাটি ওই ছাত্রলীগ নেতা ও ব্যবসায়ীর কথোপকথনের কলরেকর্ড উপস্থাপন করেছে। এই নেতার সাঙ্গোপাঙ্গরা ওই ব্যবসায়ীর দোকান ভাঙচুর করেছে। খবরে বলা হয়, ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের আরো অনেককে হলে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে টাকা আদায় করেছে এই চক্র। চাঁদা না দেয়ায় অনেকের দোকানপাট বন্ধ করে দেয় তারা। বণিক সমিতির নেতারা জানাচ্ছেন, অমর একুশে হল ছাত্রলীগকে তারা মাসে ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়ে যাচ্ছেন। তার পরও চলছে এই বাড়তি অত্যাচার।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা চুরি ছিনতাই ও সিটবাণিজ্যে নতুন ধরনের রেকর্ড করেছে। রাবি ছাত্রলীগের এক শ্রেণীর নেতা দিনের পর দিন এসব চালিয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সেখানে শিক্ষক ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা মৌন প্রতিবাদ করা হলেও ছাত্রলীগের অপরাধকর্মে ভাটা পড়েনি। গত বৃহস্পতিবার শামসুজ্জোহা হলের এক ছাত্রকে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুম থেকে তাড়িয়ে দেন। ওই ছাত্র এর প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে কাঁথা বালিশ নিয়ে অবস্থান নেন। এতে ওই ভবনে আসা-যাওয়ায় বিঘœ ঘটে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রশাসনের টনক নড়ে। ওই ছাত্রকে তার রুম ফেরত দিতে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। এমনকি উপ-উপাচার্য ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার কথা বলছেন।
গত বছর এ ধরনের বাণিজ্যের তথ্য প্রমাণ নিয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশ পায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রলীগ নেতাদের সিন্ডিকেট অর্থের বিনিময়ে সিট বরাদ্দ দেয়। এর কলরেকর্ডও পাওয়া গেছে। আসনপ্রতি তারা ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। গত বছর হলের এক ছাত্রকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। সেই সাধারণ ছাত্র টিউশনির টাকায় পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছিলেন। গত বছরের আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন একটি দোকান থেকে এক হল শাখার সভাপতি ছিনিয়ে নেন ৫০ হাজার টাকা।
ছাত্রসংগঠনটি একসময় অন্তর্কোন্দল ও কমিটি গঠন নিয়ে রক্তপাত করেছে। সংগঠনটির ভেতরে পদ-বাণিজ্যের খবরও প্রকাশিত হয়েছে। কমিটিতে পদ দেয়ার বিনিময়ে নেয়া হয়েছে বিপুল অর্থ। যারা এভাবে পদ বাগাতে পেরেছে তারা সংশ্লিষ্ট ইউনিটে চাঁদাবাজি ও নানা অসাধু উপায়ে তার মাশুল তুলছেন।
একটি ছাত্রসংগঠন যদি এভাবে দেউলিয়া হয়ে যায় তার প্রতিকার কিভাবে হবে? অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিসি-প্রোভিসি ও প্রক্টররা নিজেদের পদ ধরে রাখার জন্য এই অসাধু চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে চলছেন। এভাবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। এর প্রতিকার না হলে একটা সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে গোটা জাতিই দেউলিয়া হয়ে পড়বে।


আরো সংবাদ



premium cement