২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
মান্ধাতা আমলের রেলব্যবস্থা

আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত

-

দেশে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। মানুষের চাহিদা ও সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, দেশের কিছু এলাকায় নৌপথের দরকার বেশি, কোথাও টেকসই সড়কপথ নির্মাণ প্রয়োজন, কিছু এলাকায় রেল হতে পারে সুবিধাজনক যোগাযোগ। অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্যপূর্ণ যোগাযোগের কথা সরকার বিগত এক যুগে ভাবেনি, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্পে বেশি অর্থ খরচ করার দিকে বর্তমান সরকার নজর বেশি। যেমন : সারা দেশে রেলপথ জরাজীর্ণ, সেদিকে সরকারের খেয়াল নেই। সময়মতো সংস্কার করা হলে কম সময়ে এবং স্বল্প খরচে রেলে বেশি যাত্রী চলাচল করতে পারতেন। সেই কাজ না হলেও মেট্রোরেলেরে মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বহুগুণে অধিক ব্যয়ে বেশি আগ্রহী সরকার।
সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আমাদের রেলপথের ৭৫ শতাংশই মেরামত প্রয়োজন। অন্যদিকে এ সময়ে সরকার উন্নতমানের রেলইঞ্জিন ও কোচ যুক্ত করেছে। তবে জরাজীর্ণ রেলপথ হওয়ায় দ্রুতগতির এসব ট্রেন রেলযাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে পারেনি। যে সময়ে এগুলো রেলবহরে সংযুক্ত হয়েছে তখনই বরং রেলের গড় গতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
সারা দেশে এক হাজার ৩৫০টি অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে। লক্ষণীয়, বৈধ-অবৈধ অধিকাংশ লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসবও রেলের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়াও যেখানে রেলব্রিজ নির্মিত হয়েছে সেখানে প্রয়োজনীয় সংস্কার হয়নি। অনেকগুলোর অবস্থা শোচনীয়। নতুন ইঞ্জিন ও বগি যুক্তের পরও ৭৩ শতাংশ ইঞ্জিন ও ৫২ শতাংশ কোচ মেয়াদোত্তীর্ণ। মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্প নিয়ে যে অর্থ ও শক্তি বিনিয়োগ করা হয়েছে কিংবা পদ্মা ব্রিজে রেল সংযোগে যে হারে উচ্চব্যয় করা হচ্ছে; এর একটা অংশ সারা দেশের রেল সংস্কারে ব্যয় হলে এই মাধ্যমের যাতায়াতব্যবস্থা আরো আধুনিক হতো।
এক যুগে রেলের উন্নয়নে যে খরচ হয়েছে এর প্রায় ৮৫ শতাংশ ব্যয় করা হয় নতুন রেলপথ নির্মাণ, ইঞ্জিন কোচ ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণে। সাথে যুক্ত আছে বেতন-ভাতাসহ রেল কর্মকর্তা কর্মচারী ও সংশ্লিষ্টদের সুযোগ-সুবিধা। দেশে অবকাঠামো ব্যয়ে অন্যান্য প্রকল্পের মতো রেলের প্রকল্পে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়েছে। প্রকল্পের কেনাকাটায় হয়েছে ঘাপলা। পরামর্শক ব্যয়ের মতো ভুতুড়ে খরচও এর সাথে যুক্ত হয়েছে। বুলেট ট্রেন সমীক্ষার নামে শতকোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ডেমু ট্রেনের নামেও সমীক্ষায় বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হয়েছে। এগুলো করে একটি অসাধু চক্র রেলে উন্নয়নের নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ আমাদের প্রধান রেলপথ ঢাকা-চট্টগ্রামের অবস্থার উন্নয়ন হয়নি। এখনো এ পথ পাড়ি দিতে ৬-৭ ঘণ্টা লাগছে। অথচ রেলপথ সংস্কার হলে দ্রুতগতির ট্রেন নিয়ম মাফিক চালালে মাত্র তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যেত। এ সরকার ১৪০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন রেলইঞ্জিন কিনেছে। এই গতিতে এ পথ পাড়ি দিলে আরো কম সময়ে তা দেয়া সম্ভব। বাস্তবে এখনো প্রধান রেলপথগুলোতে গড়ে ৪৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চলে না। তাহলে বিগত এক যুগে রেলে বৃহৎ যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেগুলো কোনোভাবে সফল হয়েছে বলা যায় না। গত বছরও দেখা গেছে, রেলে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচে ৩৯টি প্রকল্প ব্যয় চলমান। অথচ রেলে কার্যকর সংস্কারে এর খুব সামান্য অংশও ব্যয় নেই।
আমাদের যোগাযোগ অবকাঠামো নিয়ে সরকারের নীতিগত অবস্থা যে ত্রুটিপূর্ণ নিঃসন্দেহে তা বলা যায়। তবে রেলের বিষয়টি ভিন্নমাত্রিক। এটি পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত। যোগাযোগের অন্য মাধ্যমগুলোতে ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ থাকায় সেখানে কিছু ক্ষেত্রে ভালো সেবা পাওয়া যায়। রেলের কোনো ক্ষেত্রে উপযুক্ত সেবা মিলছে না। টিকিট কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যাত্রী হয়রানি হয়, সেবার মান নিন্ম। এ বিভাগে নিয়োগে চলে লাগাম ছাড়া দুর্নীতি। প্রশ্ন হচ্ছে, কবে সরকার রেল নিয়ে জনবান্ধব নীতি গ্রহণ করবে। এ জন্য কতদিন অপেক্ষা করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement