২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
হিন্দি ছায়াছবি আমদানি নিয়ে বিতর্ক

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বৈধতা পাবে

-


দেশে এখন ভারতীয় ছবি আমদানির প্রশ্নে বিতর্ক চলছে। বলিউডের কল্পকাহিনীভিত্তিক অ্যাকশনধর্মী ছবি ‘পাঠান’ আমদানির সুযোগ দেয়া হবে কিনা তাই নিয়ে বিতর্কের শুরু। এতে জড়িয়েছেন চলচ্চিত্রের শিল্পী, পরিচালক, পরিবেশক, প্রদর্শক সবাই। যারা পক্ষে আছেন তারা বলছেন, সিনেমা হল টিকিয়ে রাখতে এটি দরকার। বিপক্ষের যুক্তি, হিন্দি সিনেমা আমদানি করলে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংস হবে।
দেশের সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, আগে যেখানে দেড় হাজার হল ছিল এখন সে সংখ্যা ৫০টিতে নেমেছে। হল বন্ধ হওয়ার কারণ মূলত অর্থনৈতিক। হলে দর্শক নেই। হলের জায়গায় মার্কেট বা মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স বানালে আয় অনেক বেশি। আমাদের চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী বা সংশ্লিষ্ট অন্যরা মানসম্পন্ন ছবি বানানোর চ্যালেঞ্জ নিতে চান না। এর কারণ শুধু যোগ্যতার অভাবও নয়, আর্থিক সঙ্গতির প্রশ্নও আছে। পাঠান ছবির বাজেট ছিল ২৫০ কোটি রুপি। আর আয় ছিল প্রথম দুদিনে ১৭৫ কোটি রুপি। যে উন্মাদনা চলছে তাতে এটি রেকর্ড পরিমাণ আয় করবে নিঃসন্দেহে। বলিউডের সুপারহিট ছবিগুলোর বেশির ভাগের বাজেট শত কোটি রুপির উপরে। আমাদের দেশে শত কোটি টাকার ঝুঁকি নেয়ার মতো প্রযোজক নেই।


কিন্তু বলিউডেও কম বাজেটের ছবি হয়। সেগুলো মুনাফাও করে। আসলে এখানে ভালো ছবি করার প্রতিযোগিতা নেই। উদ্যোগ নেই মানুষের সেন্টিমেন্ট কাজে লাগানোর। ভারতে মানুষের জীবন এবং মানবিক সম্পর্ক ও অস্তিত্বের নানা সমস্যা, সঙ্কটের পাশাপাশি ইতিহাস, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, রামায়ণ মহাভারতের মতো ধর্মীয় উপাখ্যান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একের পর এক ছবি তৈরি হচ্ছে। হিন্দু পুনর্জাগরণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে এগুলো বড় ভূমিকা রাখছে। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোতে সোর্ড অব টিপু সুলতান অথবা সুলতান সুলেমানের মতো ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তাই প্রমাণ করে দেশের মানুষ এগুলো পছন্দ করে। কিন্তু আমাদের প্রযোজক-পরিচালকরা সে পথে হাঁটেন না। এর কারণ এক কথায় যদি বলি, সার্বিকভাবে সেই পরিবেশ নেই। স্পষ্ট করে বলা যায়, সাংস্কৃতিক দিক থেকে আমরা স্বাধীন না। আমাদের চিন্তা-চেতনা গ্রাস করেছে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার অসুস্থ রাজনীতি। পাঠান আমদানির পক্ষে-বিপক্ষে যে বিতর্ক সেখানেও এসব প্রসঙ্গ ওঠেনি। চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচাতে কী করণীয় সেই মূল প্রশ্নের ধারে কাছে কেউ যাননি। শুধু এক সময়ের সুপার হিরো ইলিয়াস কাঞ্চন সামান্য আভাস দিয়ে বলেছেন, ব্যক্তিস্বার্থ আমরা সবচেয়ে বেশি দেখি। ব্যক্তিস্বার্থে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিই। আমাদের সংস্কৃতি কিভাবে টিকে থাকবে, শিল্পীরা কিভাবে টিকে থাকবেন সে ভাবনা আমাদের মাথায় নেই। ভয়টা এখানে।


অভিনেতা ডিপজল মনে করেন, হিন্দি ছবি আমদানির পেছনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্র আছে। তিনি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেছেন, হিন্দি সিনেমা মুক্তি দেয়ার ফলে নেপালের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রমাণিত হয়, আমদানি করা ছবিতে নিজেদের শিল্প রক্ষা সম্ভব নয়। চিত্রনায়ক জায়েদ খান বলেন, বাংলাদেশে কোনো হিন্দি ছবি মুক্তি দিতে চাইলে ভারতে আমার ছবি, আমাদের সংস্কৃতির ছবি মুক্তি দিতে হবে। নায়ক ওমর সানীও আমদানির বিপক্ষে তার মতামত দেন। তবে আমাদের ভুললে চলবে না, বাংলাদেশী স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর একটিও ভারতে দেখানোর ব্যবস্থা আমরা করতে পারিনি। আর বাংলাদেশে যে দু-একটি ভালো ছবি তৈরি হয় তা দিয়ে ভারতের মতো বাজারে থৈ পাওয়া যাবে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। সুতরাং, হিন্দি ছবি বা ভারতীয় ছবি আমদানি বড় বিষয় নয়। বর্তমান নেটনির্ভর দুনিয়ায় ওটিটিতে সবাই ওগুলো দেখছে। হলে মুক্তি পেলে বিষয়টি বৈধতা পাবে। ভারতের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আরো পাকাপোক্তভাবে আমাদের ওপর চেপে বসবে।
আমাদের মুসলিম সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য ও বিশিষ্টতা আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অর্থাৎ কবিতা, গল্প, উপন্যাস, চলচ্চিত্র, নাটক কোনো মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারিনি। রাজনৈতিক পরিবেশ ও সুরক্ষা ছাড়া সেটি সম্ভবও না।


আরো সংবাদ



premium cement
তৃণমূল সংগঠনের মজবুতির জন্য কাজ করতে হবে : মাওলানা আব্দুল হালিম ‘দেশ ও জাতি দুঃসময় পার করছে’ ওসমানীনগরে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ২ সহ-অধিনায়ক হতে পারেন রিজওয়ান মেক্সিকোয় মেয়র প্রার্থী ছুরিকাঘাতে নিহত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহেও ক্লাস বন্ধ ঘোষণা দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন : প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিবাদের শোষণ থেকে জনগণকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রীর শ্যালককে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নির্দেশ আ’লীগের চুয়াডাঙ্গায় হিট‌স্ট্রো‌কে যুবকের মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর নারীর মৃত্যু

সকল