২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পদ্মায় চুক্তি অনুযায়ী পানি আসছে না

পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে

-

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ৫৪টি অভিন্ন নদী। কিন্তু ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এসব নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার করছে। ফলে বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে পদ্মার পানি প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুকরণের শিকার হয়েছে। অথচ ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী আমাদের ন্যায্য পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেই ভারতের দিক থেকে। চলতি জানুয়ারিতে ভারত পদ্মায় ৩০ হাজার কিউসেক পানি কম দিয়েছে।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে উল্লেøখ করা হয়েছে, ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরের মতো এ বছরও ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল বছরের প্রথম দিন থেকে পানি পরিমাপ করছে। যৌথ নদী কমিশনের তথ্যানুসারে, চলতি জানুয়ারির প্রথম ১০ দিনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানিপ্রবাহ পরিমাপ করা হয় ৮৫ হাজার ৩১৬ কিউসেক। গত বছর এ সময় ওই পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল এক লাখ ১১ হাজার কিউসেক। অর্থাৎ জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে পানি আরো কম পাওয়া যায়। যৌথ নদী কমিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়, জানুয়ারির দ্বিতীয় ১০ দিন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ পরিমাপ করা হয় ৭০ হাজার ৮২৭ কিউসেক। গত বছর একই সময়ে একই পয়েন্টে এক লাখ কিউসেকের বেশি পানি এসেছিল।


ফারাক্কা বাঁধের কারণে উজানে পানির চাপ কমায় গত কয়েক দশক ধরে ছোট হচ্ছে এক সময়ের সুবিশাল প্রমত্তা নদীর আয়তন। এ বছর শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ করে পদ্মায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সঙ্কট আরো বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ২৬ হাজার কিউসেক পানি কম দিয়েছে। আর দ্বিতীয় সপ্তাহে কম দিয়েছে ৩০ হাজার কিউসেক। ফলে এবার চৈত্র মাসে একেবারে পানিশূন্য হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে হুমকিতে পড়বে সেচব্যবস্থা ও জিকে প্রকল্প। একই সাথে এ অঞ্চলের টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাতে পানীয়জলের তীব্র অভাব দেখা দিতে পারে।
পাবনার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পদ্মায় পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর পাঁচ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। এখন পানির স্তর ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট নিচে রয়েছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর আরো নিচে নেমে যাবে। এভাবে চললে ১০ বছর পর এ অঞ্চলে পানি পাওয়া কঠিন হবে।
একসময় পদ্মায় পাল তোলা নৌকা চলত, বড় বড় জাহাজ নোঙর ফেলত। বেশির ভাগ মালামাল পরিবহন হতো এ নদীপথে। সেই নদী এখন মরা খালে পরিণত হচ্ছে। বাস্তবে অনেক জায়গায় পদ্মার বুকে এখন নৌকার পরিবর্তে চলে ঘোড়ার গাড়ি, ভ্যান, অটোরিকশাসহ নানা যানবাহন। নদীর বুকে দাপিয়ে বেড়ায় বালুবোঝাই বিশাল ট্রাক। রাখালরা গরু চরায় দলে দলে। চলছে চাষাবাদ। এ পরিবর্তনে পদ্মার সাথে মিশে থাকা নদীপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা ও পরিবেশ হুমকিতে পড়েছে। পানি না থাকায় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। পানিস্বল্পতায় মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মৎস্যজীবীরা বেকার হয়ে পড়ছেন।
পদ্মায় গত বছরের তুলনায় এ বছর আগেভাগেই পানি কমে গেছে। কেন কমে গেছে তা শনাক্ত করতে এখনো ঢাকার কোনো উদ্যোগ নেই। আমরা মনে করি, অতিসত্বর যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে হোক, কূটনৈতিক পর্যায়ে হোক; পদ্মার পানিপ্রাপ্তির বিষয়টি ভারতের কাছে তুলতে হবে, দাবি জানাতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে চুক্তি অনুযায়ী পানিপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিল্লিøর কাছে থেকে আদায় করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement