২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
যুবদল নেতাকে না পেয়ে বাবাকে হত্যা

এই নির্মমতার সুষ্ঠু তদন্ত হোক

-

মানুষের কল্যাণ ও মানবতা প্রতিষ্ঠাই রাজনীতি। এ সুকর্ম করতে ক্ষমতার প্রয়োজন। তাই রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য হওয়া উচিত ক্ষমতা নয়, উপলক্ষ মাত্র। বাস্তবে দেশে এমন অবস্থা পুরোপুরি অনুপস্থিত। কল্যাণ ও মানবতা এখন কেতাবের কথা। দেশে কিছু রাজনৈতিক দল সব জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু ক্ষমতা আঁকড়ে থাকাকে নিয়তি বানিয়ে নিয়েছে। ফলে বিপর্যয় নিষ্ঠুরতা পুরো সমাজকে গ্রাস করেছে। শুধু প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীর মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ নেই; তাদের আত্মীয়স্বজনরা নানাভাবে হিংসা-প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত হচ্ছেন। এমন একটি নির্মমতার শিকার এক বাবা। রাজধানীতে যুবদলের এক নেতাকে না পেয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী পিটিয়ে হত্যা করেছে তার বাবাকে। সাধারণের ওপর ক্ষমতাসীনদের মাত্রা ছাড়া পীড়ন তো আছেই।
ওয়ারীর গোপী মোহন বসাক লেনের ৩০ নম্বর ভবনে গত বুধবার মধ্যরাতে নিষ্ঠুর ওই ঘটনাটি ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, আওয়ামী লীগের ৪০-৫০ জন সমর্থকের একটি দল ফয়সাল মেহবুব মিজুকে খুঁজতে আসে। তিনি ওয়ারী থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। তাকে বাসায় না পেয়ে চাচা স্বপনকে ধরে নিয়ে যেতে চায়। তখন মিজুর বাবা মিল্লøাত হোসেন তাদের বাধা দেন। পরিবারের লোকজন দলটির পরিচয় জানতে চায়। তারা পুলিশ কি না, ওয়ারেন্ট আছে কি না ইত্যাদি। জবাবে পরিবারের লোকজনের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এক পর্যায়ে মিল্লøাত আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ বলছে, হার্টঅ্যাটাকে মারা গেছেন মিল্লাত। অন্য দিকে, পরিবারের দাবি, বিএনপি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় আওয়ামী লীগের লোকজন এ আক্রমণ করেছে।
পরিবারের প্রশ্ন, বিএনপি করেছে ছেলে- বাবার অপরাধ কী? একই সময় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের আগ্রাসী অভিযানে একজন প্রাণ হারিয়েছেন। মকবুল নামে দলটির ওই সদস্যের পরিবার দরিদ্র। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস ছিলেন মকবুল। উভয় পরিবারের একই প্রশ্ন। দুর্ভাগ্য হচ্ছে- এ প্রশ্নের জবাব দিতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো অভিভাবক নেই।
এ দেশে বিরোধীদের ওপর নিপীড়নের ইতিহাস দীর্ঘ। এবারই প্রথম বিরোধী দল-মতের কারণে পরিবারভুক্ত সদস্যদের ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে এমন নয়- বর্তমান সরকারের সময়ে বিরোধী মতের হাজারো মানুষ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার। অনেক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। ওইসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। বিচার তো দূরের কথা। এ অবস্থায় সরকার সমর্থকরা প্রাণহানি ঘটিয়েও পার পাচ্ছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি এতটা অবনতি ঘটেছে যে, বিরোধীদের জন্য কোনো জায়গা রাখা হয়নি। এমন অবস্থা বহুদিন ধরে বিরাজমান। তাদের সামান্য ছাড় দেয়া হচ্ছে না। আসলে দেশে দমবন্ধ পরিস্থিতি বিরাজমান। এ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে কারো জন্য কল্যাণকর না হলেও ক্ষমতাসীনরা বুঝতে চায় না। তারা ঘৃণা ছড়িয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে চরম বৈরিতার মাধ্যমে তাদের উৎখাত করতে চায়। ওয়ারীর ঘটনাটি এর একটি নমুনা মাত্র।
তবে মনে রাখা আবশ্যক, আমাদের সবাইকেই এ দেশে পাশাপাশি বসবাস করতে হবে। এভাবে ঘৃণা সৃষ্টি করে একসাথে বাস করা যায় না। বিএনপি বলে যাদের বিরুদ্ধে স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে; তারা দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী। যারা বিএনপি করেন না; তারাও ক্ষমতাসীনদের এই আগ্রাসী নীতি পছন্দ করছে এমন নয়। তাই সরকারকে চরমপন্থা পরিত্যাগ করতে হবে।
আমরা মনে করি, ওয়ারীতে ঘটে যাওয়া নৃশংসতাকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে হবে। যারা বাসায় গিয়ে আক্রমণ করেছেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে ইতোমধ্যে বরাবরের মতো পুলিশ পক্ষপাতপুষ্ট মন্তব্য করেছে। তার পরও আমরা আশা করতে চাই, সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। মনে রাখতে হবে, বাসাবাড়িতে ঢুকে এভাবে হামলার পরও যদি দোষীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, তা নেতিবাচক বার্তা দেবে।


আরো সংবাদ



premium cement