২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ নয়

সমাবেশের পরিবেশ থাকতে হবে

-

আবারো বিরোধী দল বিএনপির ওপর পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এতে দলের একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ সময় দলটির অফিস তল্লাশি করে তালা মেরে দেয়া হয়েছে। এতে করে দেশে ইতিবাচক রাজনীতি চর্চার আবহ আবারো বিঘিœত হলো। গণতন্ত্রের জন্য এটি মোটেও শুভ নয়।
সমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়ে বিএনপি নেতাদের সাথে পুলিশের আলোচনা চলছিল। মনে হচ্ছিল, বিগত সময়ে সরকারের সাথে চলা বৈরিতার অবসান হয়ে রাজনীতিতে কিছুটা সুবাতাস বইছে। এর আগের বিভাগীয় সমাবেশে পুলিশ আগ্রাসী আচরণ করেনি। সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বাধা দেয়া হয়েছিল। সেসব ক্ষেত্রে পুলিশ কিছুটা জড়িত থাকলেও গণসমাবেশ আয়োজন আগের মতো একেবারে ঠেকিয়ে দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় ঢাকায় দলটির নেতাদের সাথে পুলিশের আচরণ দেখে আশ্বস্ত হওয়ার মতো অবস্থা ছিল যে, কিছুটা বৈরিতা দেখালেও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার বলপ্রয়োগ করে থামানো হবে না।
বাস্তবে পুলিশ হঠাৎ করেই আগের বৈরী আচরণে ফিরে গেছে। দলীয় অফিসের সামনে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে নির্দয় অভিযান চালিয়েছে। এতে জানমালের ক্ষতি হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে তল্লাশি চালানোর স্বাভাবিক নিয়ম মানা হয়নি। আগের মতোই পুলিশের একই অভিযোগ সেখানে ককটেল পাওয়া গেছে। বিশ্বাসযোগ্য কোনো ধরনের আলামত ছাড়া তারা বলছে, নাশকতার উদ্দেশ্যে এগুলো দলীয় অফিসে রাখা হয়েছে। অথচ বিএনপি একটানা সবগুলো বিভাগে গণসমাবেশ করেছে। সেখানে কোনো ধরনের সন্ত্রাস দূরে থাক বিশৃঙ্খলাও হয়নি। উল্টো দলটির নেতাকর্মীরা মারধর হেনস্তার শিকার হন। তাদের এ পর্যন্ত আটজনের প্রাণ গেছে। সরকারি দল ও পুলিশের পক্ষ থেকে উসকানি সত্ত্বেও সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার পর তারা ঢাকায় বিনা কারণে নাশকতা করবে, এমন অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয়। নিজেদের জন্যই তাদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা প্রয়োজন। এ অবস্থায় পুলিশের এমন বক্তব্য পুরো বাহিনীর প্রতি অনাস্থা আরো বাড়াবে।
বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নয়। বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের ওপর নজর রাখছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার নিয়ে ইতোমধ্যে জাতিসঙ্ঘ ও পশ্চিমা বিশ্ব মতামত প্রকাশ করেছে। পরামর্শ দিচ্ছে, যাতে বিরোধী দলসহ সবাই সমানভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পারে। এ ঘটনার দিন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে মত প্রকাশ ও সমাবেশের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকারের কথা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। তার আগের দিন ঢাকায় অবস্থিত ১৫টি দূতাবাস ও হাইকমিশন এক যৌথ বিবৃতিতে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুরুত্বারোপ করেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলছে; সুতরাং আমাদের সহযোগী বন্ধুরাষ্ট্রগুলো এসব ব্যাপারে সক্রিয় রয়েছে। তারা চান বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন একটি পরিবেশ ফিরে আসুক। তাদের প্রত্যাশা অগ্রাহ্য করে আমরা এগিয়ে যেতে পারব না। ক্ষমতাসীন পক্ষকে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।
এ অবস্থায়, রাজনৈতিক কর্মসূচি ব্যর্থ করার আগ্রাসী পথ পরিহার করতে হবে। পরিস্থতির উন্নতি ঘটাতে হলে বল প্রয়োগের নীতি থেকে সরে আসতে হবে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে মামলায় জড়ানোর অপকৌশল ত্যাগ করতে হবে। বিভেদ-বিভক্তি পরস্পরের ঘৃণা সৃষ্টি কোনোভাবে কল্যাণ বয়ে আনবে না। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নিতে হবে। দেশের বৃহৎ অংশকে অসন্তুষ্ট রেখে সেই ঐক্য সম্ভব নয়। ঢাকায় বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার মাধ্যমে এ ঐক্যের প্রচেষ্টা শুরু হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement